শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন
আদালতের নির্দেশনা অমান্য করায় এবি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অ্যাক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) আমিনুল ইসলাম এবং ব্যাংকটির সাতক্ষীরা শাখার ব্যাবস্থাপককে গ্রেফতার করে রোববার (৫ জুন) হাইকোর্টে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার গুলশান থানা ও সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
আদালতের নির্দেশনার পরও হিসাব বিবরণী (স্টেটমেন্ট) না দেওয়া এবং উচ্চ আদালতে ব্যাংক কর্মকর্তা উপস্থিত না হওয়ায় হাইকোর্ট তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাতক্ষীরার ঠিকাদার মো. শফিউর রহমান শফি এবি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের বিপরীতে তিনি একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেয়ে ব্যবস্থাপকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর শফিউর রহমান ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেয়ে গত ১৮ মে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
গতকাল (৩০ মে) ওই রিট শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনীকে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ও সাতক্ষীরা শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেন। এবং গ্রাহক সফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়ার কথা জানিয়ে দিতে বলেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে আদালতের মৌখিক আদেশের কথা জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে আদালতের আদেশ অনুয়ায়ী এভিপি আমিনুল ইসলামকে আজ (৩১ মে) আদালতে হাজির থাকার কথা জানিয়ে দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
এরপর রিটকারী শফিউর গতকালই (৩০ মে) এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় স্টেটমেন্ট আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। হাইকোর্টের আদেশের পরও ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ায় আদালত আজ তাদের গ্রেফতার করে আগামী ৫ জুন হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পসহ চারটি প্রকল্পের কাজ পায় শফিউর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চার প্রকল্পের মধ্যে দুটি প্রকল্পের কাজের অনুকূলে ঠিকাদার মো. শফিউর রহমান শফি এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখা থেকে ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর ৭০ লাখ এবং ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর ৭৫ লাখ, মোট ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ‘গতি ঋণ’ নেন।
ঋণের শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের অনুকুলে চেক দিয়ে প্রকল্পের বিল (পাওনা) পরিশোধ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় চেকের মাধ্যমে সে বিল জমা হলে বিলের একটি থেকে ৪০ শতাংশ এবং আরেকটি থেকে ৪৫ শতাংশ ঋণ সমন্বয়ে করে কেটে রাখবে ব্যাংক। বাকি টাকা ঠিকাদার শফিউর রহমানকে দিয়ে দেওয়া হবে। প্রকল্পের কাজ শেষে ২০১৭ সালে দুই প্রকল্পের সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে পাউবো।
এরপর শফিউর রহমান হিসেব অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ পরিশোধ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় তার কাছে এখনও ১ কোটি ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৯ টাকা পাওনা রয়ে গেছে। এরপর ঋণের টাকা চেয়ে ২০১৭ সালে এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে শফিউর রহমান এবি ব্যাংকে পাউবো কোন তারিখে কত টাকার চেক জমা দিয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ চেয়ে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখা আবেদন করেন। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় গত ১৮ মে ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন শফিউর।