মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলে ঘেরা সবুজ বাংলাদেশের গ্রীষ্ম ঋতুর বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ্য মাসের হরেক রকম বাহারি ফলের মধ্যে প্রতিটা বাঙালী রন্ধে রন্ধে মিশে আছে আমের স্বাদ।
সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও আমের মৌসুমে আমের আমদানি পর্যাপ্ত না থাকার কারণে আমের দাম গত বছরের তুলনায় বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এতে করে আমের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা এবার আবহাওয়ার বৈরি আচরণের ঝড় বৃষ্টির কারণে আমাদের দেশের খ্যাতোনামা আম লিচুর স¤্রাজ্য উত্তর বঙ্গের আম চাষিদের পরতে হয়েছে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যো। থেকে থেকে শিলা বৃষ্টি আর ঝড়ের তান্ডবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অর্ধেক পরিমাণে আমের ফলন হয়নি।
তবে শুরুতে গাছে সেই পরিমানে আমের বইল থেকে আমের রুপ ধারণ করে ছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে যদি আবহাওয়ার ক্ষিপ্ররুপ ধারন না করতো তাহলে আমাদের মতন চাষিদের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত আমে দেশ সয়লাব হয়ে যেতো এমনকি বিশ্বের বাজারেও অনেক বেশি আম সরবরাহ করতে পারতাম বলে ধারণা ছিলো কিন্তু ঝড় বৃষ্টির তান্ডবে ঠিক তার উল্টোরুপ দেখতে হচ্ছে আমাদের বলে জানালেন চাঁপাই নবাবগঞ্জে থেকে খুলনায় আম বিক্রির টাকা আমদানি নিতে আসা আমচাষী বিল্লাল হোসেন।
তিনি আরো বলেন বর্তমানে আমাদের বাগানে যে পরিমানে আম রয়েছে সে গুলো সব বিক্রি করলেও আমাদের আসল খরচের টাকা ঘরে তুলাটাই মুশকিল হবে। আর যাঁর কারণে এবার সমগ্র মৌসুম জুঁড়ে পর্যাপ্ত আমের যোগান দেওয়া সম্ভাব হয়ে উঠবেনা। আর সেই জন্যই এবার তুলনা মূলকভাবে গত বছরের তুলনায় ক্রেতাদের দ্বিগুণ দাম দিয়ে আম কিনে খেতে হবে।এদিকে আবার খুলনা ষ্টেশন রোডের পাইকারি ফলের আড়ৎ মদিনা ফল ভান্ডারের মালিক রুস্তুম মিয়া জানান এখনপর্যন্ত প্রকার ভেদে কম বেশি আম যেমন গোপাল ভোগ, আম্রপালী, হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, চুষা ল্যাঙ্গরা সবধরণের আমই কমবেশি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় দামও বেশি এখন পর্যন্ত ভালোজাতের গোপাল ভোগ বর্তমানে বাজার দর ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ল্যাঙ্গরা ফ্রেশটা ৮০ থেকে ১০০ টাকা সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হিম সাগর, আর চুষা। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকাতে বন্যার কারণে তরকারীর দামও আকাশ ছোঁয়া কোনো সবজি ৪০ টাকা কেজির নিচের মিলছেনা তারপর আবার বাজারে সকল দ্রব্যমূল্যের কথাতো বলাই লাগেনা। সবকিছু মিলে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষদের আম কিনে খাওয়া দূরলভ্য সাধ্য সাধারণত ১ কেজি মধ্যোম শ্রেণির আম কিনতে গেলেও ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার কমে মিলছেনা।
তবুও যে সকল আম পিপাসুদের সমার্থ আছে ঠিকই তারা আমের দোকানে ভিড় জমাচ্ছে। যে কোনো ফলের সাথে আমের স্বাদের তুলনা সামিল করলে একেবারেই বোকামী হবে। আমাদের দেশে গ্রীষ্ম ঋতুতে নানান প্রকার বাহারি ফলের মৌসুম বলে পরিচিত তার মধ্যো সেরা আম আর আম নিয়ে রয়েছে সকল মানুষ জীবনের কৈশরের অসংখ্য স্মৃতিময় গল্প কথা। তাছাড়া আম নিয়ে দুই একটা ছড়া কবিতা লিখেনি এমন সংখ্যক কবি খুঁজে পাওয়াই যাবেনা।
সব থেকে মূল্যবান কথা আমাদের মাতৃভূমির স্বাধিকা অর্জনের সময়কালে রয়েছে মুজিব নগরের আম্রকাননের ইতিহাস যা আজো সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এক ইতিহাস। কবি মাইকেল মধুসুধনের আম্রকানন, কবিগুরু রবি ঠাকুরের আম্রবাগান, পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের গরমের হাওয়ায় আম্রগাছের শীতল ছায়ায় পাতিয়া পাটি গাত্র করিয়াছি গহন আমের মৌময় ঘ্রাণে মুগ্ধ করেযে মন। সব মিলিয়ে আমের ব্যাখ্যার কোনো জুঁড়ি নাই বললেন খুলনার জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি বিমল কৃষ্ণ রায়।
খুলনা ডাকবাংলা মোড়ের খুচরা ফল বিক্রেতা ফজলু মিয়া বলেন আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই আমের উপর লালসা বেশি। আর বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ্য মাস আসলে ধনি হোক আর গরীব হোক কারো ঘরে আম থাকবেনা সেটাই যেনো মন থেকে মেনে নেওয়াটাই কঠিন দুষ্কর। গরমের সময় সনাতনী প্রথা অনুযায়ী স্কুলকলেজগুলোতে গৃষ্ম কালীন ছুটি দিলেই শহড় ছেড়ে গ্রামে ছুটে যাওয়ার হিড়িক পরে যায় প্রতিটা পরিবারের মধ্যে।
এমনকি যাঁরা দেশের বাইরে থাকে প্রবাসী বাঙালী তানারাও সুদুর বিদেশ থেকে প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে ছুটে আসে মা মাটির টানে রসালো স্বাদের ফল আমের স্বাদের লোভে। আর আমাদের দেশে তো আদী আমলের পুরাতন প্রথা রয়ে গেছে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ্য মাস আসলে ফল ফলাদী দিয়ে জামাই খুশির উৎসব জামাই ষষ্ঠি আর এই জামাই ষষ্ঠি উৎসব জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পালন করে আসছে। সাধারণত প্রতিটা বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ধনি গরীব পরিবারেই যে যাঁর সাধ্য মতন জামাইদের নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে না আনতে পারলে সব পরিবারের কাছেই সমগ্র বছরের উৎসব অপরিপুর্ণ থেকেই যায়। আর সব কিছুর কেন্দ্র কিন্তু রয়েছে আম, কাঠাল গৃষ্মের ফলবাঙ্গী, তরমুজ, জামরুল, আঁতা, লিচু। তবে যে যাই বলুক আম দুধের মিশ্রণ স্বাদ অতুলনীয় যাঁর জুঁড়ি মেলাটাই অপ্রতুল।