বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় ইটভাটা আছে ১ হাজার ৫৩৬টি। এর মধ্যে ৬৩.৫ শতাংশই অবৈধ। অর্থাৎ ৯৭৬টি ইটভাটা অবৈধ বিবেচনা করেছে প্রশাসন। ফলে জেলাগুলোতে বৈধ ইটভাটার তুলনায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে আবার তিন পার্বত্য জেলায় কোনো ইটভাটার অনুমোদন না থাকলেও সেখানে অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে ১৪২টি ইটভাটা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগের সর্বোচ্চ সংখ্যক ইটভাটা চট্টগ্রাম জেলায়। এই জেলার ৪১৯টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ কেবল ৮২টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইটভাটা কুমিল্লা জেলায়। এখানে ২৭৪টি ইটভাটার মধ্যে ১৬৮টি বৈধ। তবে এই জেলায় তুলনামূলকভাবে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেশি।
এ ছাড়া কক্সবাজারে ৭৮টির মধ্যে ৪৬টি, ফেনীতে ১০৩টির মধ্যে ৬০টি, নোয়াখালীতে ১১৬টির মধ্যে ৬৬টি, লক্ষীপুরে ১৫৭টির মধ্যে ৯১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ১৫১টির মধ্যে ৭৫টি, চাঁদপুরে ৯৬টির মধ্যে ৫৩টি ইটভাটা অবৈধ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ২৮টি, খাগড়াছড়িতে ৪৪টি ও বান্দরবানে ৭০টি ইটভাটার সবগুলোই অবৈধ।
পরিবেশ বিধ্বংসী এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দুই বছর আগে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের রিট মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের আদেশ দেওয়া হলেও দুই বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে ইটভাটা উচ্ছেদে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে গত তিন মাসে ২৫০টির অধিক ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মনিটরিং টিমের সদস্য সচিব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম অঞ্চল) পরিচালক নুর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রত্যেক জেলাতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা অবৈধ ইটভাটা বন্ধের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সবাই কাজ করছেন। এটা জোরদার থাকবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও কিছু ইটভাটা পুনরায় চালু করা হচ্ছে। ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন স্কেভেটর, ট্রেলার, শ্রমিক এবং যানবাহনের দরকার হলেও অনেক সময় এই সাপোর্টগুলো পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এছাড়া পার্বত্য এলাকায় রাস্তাঘাট সরু হওয়ায় লজিস্টিক আনা নেওয়া করা কঠিন হয়।
এ ব্যাপারে মনিটারিং টিমের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) শারমিন জাহান বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলার সকল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মনিটরিং টিমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, কৃষি বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয় করে কাজ করছেন। সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। অভিযানের পর নতুন করে নির্মাণ হলেও পুনরায় অভিযান হবে।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রতিবেদনে বিভাগের প্রতিটি জেলার পূর্ণাঙ্গ ইটভাটার তালিকা তৈরি ও বনজ কাঠের ব্যবহার বন্ধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, তার প্রতিবেদন দুই সপ্তাহ পর পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় মনিটারিং টিম উপজেলা পর্যায়ে সরেজমিন পরির্দশন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।