শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ নান্নু মৃধা, শরীয়তপুর, প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর -চাঁদপুর চার লেন আঞ্চলিক সড়ক নির্মানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম-মংলা বন্দরের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের এ আঞ্চলিক মহসড়ক নির্মানের প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
এ মহাসড়কটি চট্রগ্রাম বন্দর থেকে মংলা বন্দরের সাথে সংযোগের পাশা পাশি শরীয়তপুর মাদারীপুর,বরিশালসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে যোগাযোগ সহজহবে।এতে শুধু এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের উন্নযনের সাথে সাথে পোর্ট টু পোর্ট সংযুক্তির হবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরো গতিশীল হবে।
কিন্তু নানান জটিলতায় চার বছরেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ২৯ কিলোমিটারের কাজ বন্ধ থাকায় মহসড়কটি বাস্তবায়নে জনমনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে ৬ কিলোমিটারের কাজ চলমান থাকলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং বাড়তি বরাদ্দ ও পুর্নদবপত্র আহবান কাজ চলমান থাকায় দৃশ্যত ২৯ কিলোমিটারের কাজ আটকে আছে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে শরীয়তপুর সদরের মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কটি সম্প্রসারণ, মজবুতকরণ, সার্ফেসিং ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৩টি প্যাকেজে প্রকল্প অনুমোদন দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে তিনটি প্যাকেজে কাজ করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে মাত্র ৬ কিলোমিটার অংশের কাজ চলমান রয়েছে।বাকী অংশের জমি বুঝে না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৯ কিলোমিটারের কাজ শুরু করতে পারেনি।
ফলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় সেই কার্যাদেশ বাতিল করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে সর্বশেষ মোট ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহবান করে মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অফিস সূত্র আরো জনাায় বাড়তি ব্যয় মেটাতে ডিপিপি সংশোধনেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পম গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০০১ সালে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি চালু হওয়ার পর থেকেই খানা-খন্দের কারনে খুলনা-চট্টগ্রামের যাত্রিবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
২০২১ সালে সরকার মহাসড়কটির কাজ শুরু করায় আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু চার বছরেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা এখন হতাশায় ভুগছি। তারপর বর্তমান সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারনে আদৌ সড়কটি বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও আশংকায় আছি।
একই উপজেলার চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের স প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মহাসড়ক চালু হওয়ার পর থেকেই এই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তার পর থেকেই আমরা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি।
বৃষ্টির মৌসুমে সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। চার লেনের কাজ শুরু হয়েছে শুনে আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। কিন্তু চার বছরেও কাজের তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় সড়কটিএখনো মানুষের ভোগান্তির কারণ ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, যাতে দ্রুত যেন এই সড়কটির কাজ শেষ করে আমাদের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন করা।তাহলে শরীয়তপুর জেলার মানুষের জন্য অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হব।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের আন্তজেলা বাস চালক আবুল হোসেন বলেন, ৩০ বছর যাবত বাস ও ট্রাকের চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
শরীয়তপুর ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন জেলার মহাসড়কের অবস্থা এত খারাপ দেখি নাই। বিশেষ করে শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক এখন যানবাহন চলাচলের জন্য অযোগ্য সড়ক। এ সড়কে যাত্রিদের যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় চালকদের ঝুঁকি তার চাইতে অনেক বেশি। আর ভারী পণ্যবাহী ট্রাক হলে তো কথাই নেই। শুধু গাড়ির যন্ত্রাংশই ভাঙ্গেনা আমাদের শারীরিক সমস্যাও বেড়ে যায়।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়তি ব্যয় ও পুর্নঃদরপত্র আহবান প্রক্রিয়ার কারণে ৩৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬ কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ২৯ কিলোমিটারের কাজ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুর্ন দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমরা প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।