শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন বিশেষ প্রতিনিধি –
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫১ কিলোমিটার। জেলা প্রশাসনের নতুন তালিকা অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ২০ পয়সা হিসাব করে করে ভাড়া আসে ৩৩২ টাকা। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৪২০ টাকা আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কক্সবাজার থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সকল সড়কের বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল (১০ আগস্ট) বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে পরিবহন মালিক, নেতা ও বিআরটিএ’র সাথে প্রশাসকের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এনিয়ে এক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
তবে সিদ্ধান্তের দিনেই জেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। প্রজ্ঞাপনে দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার থেকে রামুর (চৌমুহনি) দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। এই রাস্তার পূর্বের ভাড়া ৪০ টাকা, বর্তমানে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে ঈদগাঁওয়ের দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪ টাকা। আগে এই সড়কের ভাড়া ছিল ৬৮ টাকা। খুটাখালির দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। এই রাস্তার আগের ভাড়া ৮৬ টাকা যা বর্তমানে ১০৬ টাকা করা হয়েছে।
কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে চকরিয়া বাস টার্মিনালের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। এই পথে বাস যোগে যাতায়াত করতে যাত্রীদের গুনতে হবে ১২৮ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হয়ে বদরখালি ভায়া চকরিয়া দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। আগে এই সড়কে যাতায়াতে গুনতে হতো ১৩৫ টাকা, বর্তমানে গুনতে হবে ১৬৫ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল হয়ে মগনামা ভায়া চকরিয়ার দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। আগে ছিল ১৫৫ টাকা, বর্তমানে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে উখিয়া স্টেশনের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার।
আগের ভাড়া ৪৯ টাকা হলেও বর্তমানে গুনতে হবে ৫৯ টাকা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে ইনানী বীচ পয়েন্টের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। আগের ভাড়া ৬৩ টাকার স্থলে বর্তমানে ৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে টেকনাফের দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। আগের ভাড়া ১৪৮ টাকার স্থলে বর্তমানে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে ঢাকার দূরত্ব ৪৪০ কিলোমিটার। এই রাস্তার নতুন ভাড়া ১১০০ টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ, এসব সিদ্ধান্ত কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাঠে এর প্রয়োগ নেই। প্রশাসন দায়সারা বৈঠক করে ভাড়া নির্ধারণ করে ঘুমিয়ে থাকে। আর এই সুযোগে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বাস মালিকরা।
সরেজমিনে কক্সবাজার শহরের বাস কাউন্টারগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের বাস যাত্রীদের কাছ থেকে ৪২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। টেকনাফের নন এসি বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। চকরিয়ায় জন্য গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা। এ বিষয়ে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষার জাতীয় কমিটির কক্সবাজার জেলার সদস্য সচিব কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে জনগণের হয়রানি নতুন কিছু নয়।
এখানে প্রশাসন সবসময় দায়সারা কাজ সারে। তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা আর মনিটরিং করে না। পাশাপাশি আমাদের জনগণও সচেতন নয়। তারা প্রতিবাদ না করে সব অত্যাচার নীরবে সহ্য করে। এই সুযোগটাই কাজে লাগায় পরিবহন মাফিয়ারা। তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা বৈঠকেই পরিবহন সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছি ভাড়া নিয়ে কেউ অরাজকতা করলে কাইকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
ভাড়ার বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। তিনি আরও বলেন, বাস কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে শহরের জাম্বুর মোড় থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত সমস্ত পকেট/এজেন্ট কাউন্টার সরিয়ে নিতে। এছাড়া যেসব দূরপাল্লার বাস শহরে প্রবেশ করে তাদেরকেও নিষেধ করা হয়েছে। এটি পুরোপুরি আগামী শীত মৌসুমের আগেই আমরা বন্ধ করে দেব। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনূর রশিদ বলেন, এ ভাড়া বৃদ্ধি গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল চালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে