বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি:
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ বিল্লাল হোসেন।  আইনবিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট রাসেল । যোগাযোগ : ০৩১-৭২৮০৮৫, ০১৮১১৫৮৮০৮০ মেইল: bdprotidinkhabor@gmail.com জহুর উল্লাহ বিল্ডিং (৩য় তলা), পানওয়ালা পাড়া, চৌমুহনী, উত্তর আগ্রাবাদ ১২৭৭, চট্টগ্রাম।
সংবাদ শিরোনাম:
উন্নয়ন চাইলে নৌকার বিকল্প নেই-ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বিজিবির শততম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ সম্পন্ন পদুয়ায় বাজারে সাত টি দোকানে ভয়াবহ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত সিএনজি চালক মোঃ কামাল হোসেন, মৃত্যুবরণ করেন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগেই ‘হোঁচট’ খেয়েছেন চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনে হেভিওয়েট আট প্রার্থী যশোরে বিএনপির ডাকা অবরোধে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ভোটারের ভুয়া স্বাক্ষরসহ গুরুতর সব ‘গরমিল’ ২ স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল হয়েছে মৃত্যু কুফে পরিনিত চট্রগ্রাম কক্সবাজার হাইওয়ে স্বামীরা ক্ষমতাধর,অর্ধাঙ্গিনীরা সম্পদশালী কেউ কেউ সম্পদে স্বামীকেও ছাড়িয়ে গেছেন সংসদীয় আসন নং-২৯২, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেব এবং ডা. মিনহাজের মনোনয়নপত্র বাতিল

নরসিংদীতে প্রকৌশলী খায়রুল বাকের সমাজ সেবা কাজের অগ্রদূত হিসেবে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন

নরসিংদী জেলা বেলাব উপজেলা এর কৃতি সন্তান সাদা মনের মানুষ প্রকৌশলী খায়রুল বাকের সমাজ সেবা কাজের অগ্রদূত হিসেবে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।জানাগেছে,সমাজে কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা নামে-দামে খুব বিখ্যাত কেউ নন কিন্তু গুণে-মানে নীরবে-নিভৃতে সমাজের আলোকশিখা হয়ে দীপ্যমান থাকেন। আমরা সুনামে সিক্ত করে তাদের বলি ‘সাদা মনের মানুষ’। তাদের অনেকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন নিভৃতে। তেমনি একজন সাদা মনের মানুষ বেলাব উপজেলার সররাবাদ গ্রামের প্রকৌশলী খায়রুল বাকের। প্রথাগত বিখ্যাত কেউ নন তিনি, কিন্তু মুক্তচিন্তা-চেতনায় লালিত, নাগরিক জীবনের বাইরে সাধারণ জীবন অতিবাহিত করা একজন প্রকৌশলী খায়রুল বাকের। জীবনাচরণে মননশীল, সহজ-সরল মানসিকতায় উজ্জীবিত খায়রুল বাকেরকে নীরবে-নিভৃতে যাপিত জীবনের ‘সত্যিকার ভালো মানুষ’ হিসেবেই জানেন এলাকার জনসাধারণ। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সররাবাদ গ্রামে জন্ম নেওয়ার সময় সেই জনপদ ছিল সত্যিকার অর্থেই অজপাড়াগাঁ, যাকে বলি ‘গাঁও-গেরাম’, এখন উন্নয়নের জোয়ারে সেখানে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে।

সেই ‘গাঁও-গেরাম’ সররাবাদের ছেলে প্রকৌশলী খায়রুল বাকের। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সররাবাদ গ্রামে জন্ম। পিতা মিন্নত আলী মাতা ফজিলাতুন নেছার ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি সপ্তম। তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মানবসেবায়। একজন মানবিক প্রেমিক হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশেষ করে নিজ এলাকা নরসিংদীর বেলাবতে। সু-মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখা আর নতুন প্রজন্মের কাছে তা ছড়িয়ে দেওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত।

চারিদিকে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে সুবিধালোভী মানুষের প্রতিযোগিতা, তার ভিড়ে নিভৃতচারী খায়রুল বাকের নিজ এলাকায় আলোকবর্তিকা ছড়াচ্ছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা হিসেবে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে ১৭টি সড়কের নামকরণ হয়েছে- এমন ঘটনা বিরল। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সমাজসেবায় কী কী করেছেন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কতগুলো লেখা বা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে- সব জানা না হলেও আগরতলা মামলার ২৯নং অভিযুক্ত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট জলিলের ২০২২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে তার যে আন্তরিক কর্মতৎপরতা, সেই গল্প শুনে প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হওয়া যায় খুব সহজেই।

সার্জেন্ট জলিলকে নিয়ে লিখেছেন ‘একটি গ্রেনেড, আগরতলা মামলা ও সার্জেন্ট জলিল’; যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এ প্রকাশিত, শুনেছি সমাদৃতও হয়েছে বেশ। বহু তথ্য, ছবিসমৃদ্ধ গ্রন্থটি নি:সন্দেহে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল।গ্রন্থটি রচনার সময়ই বাকেরের অন্তর কেঁদে উঠেছিল- সেই আগরতলা মামলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের এত বছর অতিবাহিত হবার পরেও সার্জেন্ট জলিল কোনো জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হননি! তড়িঘড়ি করে সার্জেন্ট জলিলকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের জন্য আবেদন করে বসলেন! কিন্তু অসম্পূর্ণ আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলো। দমার পাত্র নন খায়রুল বাকের। ২০২২ সালে আবার আবেদন করবেন যথাযথভাবে। সরকারের প্রতি নির্ধারিত ফরমে এ আবেদনে থাকতে হয়- বিভিন্ন দলিলের সংযুক্তি, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বা বরেণ্য কোনো ব্যক্তির সুপারিশ ইত্যাদি। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত কয়েকজনের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন, ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ফিরতে হয়েছে, সুপারিশ পাননি! অবশেষে সম্মতি জানালেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও পরিবেশকর্মী ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

সময় দিলেন বেলা আড়াইটায়, যেদিন বিকাল ৫টায় আবেদনের শেষ সময়। যথাসময়ে স্বাক্ষর নিয়ে ঝড়ের বেগে ফিরলেন অফিসে। একেকটি আবেদনে ৪ কপি ছবি, ২৭টি সংযুক্তি- এমন ৩৮টি আবেদনের সেট বানাতে হবে। কয়েকজন সহকারীর সাহায্যে সব সেট রেডি করতে করতে বেজে গেল ৪টা ৪৫। হাতে আছে মাত্র ১৫ মিনিট সময়, জমা দিতে হবে সচিবালয়ে, বেশি দূরে নয়, গাড়ি নিয়ে ছুটলেন। গেটে আটকে দেওয়া হলো, পাশ নেই! কয়েক মিনিট মাত্র আছে। ভেতরে পরিচিতজনকে ফোন করলেন, তিনি বললেন অন্য আরেকটি গেট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করতে। ৩৮ সেট আবেদনের বান্ডিল মাথায় নিয়ে দৌড় দিলেন সেই গেটে, জানলেন গেটটি বন্ধ হয়ে গেছে। আবার দৌড়ে ফিরে এলেন প্রথম গেটে। সেই পরিচিতজনকে এবার ফোন করে অনুরোধ জানালেন স্বয়ং এসে সেই বান্ডিল নিয়ে গিয়ে জমা দিতে। তিনি এসে খায়রুল বাকেরকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আবেদন জমা দেয়া হলো, তখন ঘড়িতে ৪টা ৫৮। ওই আবেদনেই সার্জেন্ট জলিল পেলেন ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী ম থেকে নেমে এসে সামনে বসে থাকা অশীতিপর বীরের হাতে তুলে দিলেন সেই সম্মাননা। ছোট্টবেলা থেকেই প্রখর মেধাবী খায়রুল বাকের ১৯৮৪ সালে ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় নরসিংদী মহকুমার মধ্যে ১ম হয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এছাড়া কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেই বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েও মন মতো বিষয় না পেয়ে চুয়েটে পড়াশোনা করেন। তখনকার সময়ে ক্লাস নাইনের ভালো ছাত্ররা স্কুলের যেকোনো প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিতেন। সেই সময়ে ক্লাসের ফার্স্ট বয় হিসেবে ছাত্ররাজনীতির সব প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিতেন এই খায়রুল বাকের। ১৯৮৯ হতে ১৯৯৫ পর্যন্ত চুয়েটে তিনি শহিদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং চুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তখন ছাত্রশিবির ও এনডিপির বহু নির্যাতনের শিকার তিনি হয়েছিলেন। তার শরীরে সেসবের চিহ্ন এখনো আছে। চুয়েটে থার্ড ইয়ার পর্যন্ত প্লেসধারী ছাত্র হলেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ঘনিষ্ঠতার কারণে পরীক্ষার পূর্বে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় তার প্লেস ছুটে যায়। তারপরও সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ১ম বিভাগ পেয়ে পাশ করেন এবং পরে উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ পেয়েও চাকরি করা জরুরি প্রয়োজন থাকায় বিদেশে পড়তে যাননি। প্রকৌশলী খায়রুল বাকের দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ঢাকার বেলাব সমিতির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২০ সালে নরসিংদীর উত্তর-পূর্বা লের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন এবং এলাকার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন; মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব সবার সামনে তুলে ধরছেন। এছাড়া এলাকায় শিক্ষা প্রসারের কাজে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

এমনকি নিজ এলাকার নরসিংদী বেলাবতে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলিত কবর সংরক্ষণ ও পাকাকরণের ব্যবস্থাও করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু লায়েছ ও আবদুস সালামের কবর। এছাড়া অনেক শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকদের নামে বিভিন্ন রাস্তার নামকরণ করেছেন খায়রুল বাকের। সেগুলো হচ্ছে- শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক নূরু সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট (অব.) জলিল সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য রাজনৈতিক বাবর আলী সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক সার্জেন্ট কাদির সড়ক, সংগঠক সামসুল ইসলাম (সুরুজ ফকির) সড়ক, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক, সংগ্রামী কৃষক নেতা ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ ফজলুল হক খোন্দকার সড়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক কমরেড আবদুল হাই সড়ক, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক, কৃষক নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হক ভূঞা ( মাহতাব) সড়ক। এছাড়া প্রস্তাবিত আছে আরও ৮টি সড়কের নামকরণ।

এসব বিষয়ে খায়রুল বাকেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, তার শিক্ষাগুরু আবদুল হামিদ এমএসসি সাহেবও এলাকায় কাজ করতে এসে বিভিন্ন বাধা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। আমার বেলায়ও হবে- এ কথা জেনে-বুঝেই কাজ করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও করব।নরসিংদী প্রেস ক্লাবের কোষাদক্ষ জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশের সব শিক্ষিত সচেতন জনসাধারণ প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি এলাকায় যদি খায়রুল বাকেরের মতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতেন, সমাজ উন্নয়নে আনাচে-কানাচে কাজ করতেন তাহলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যেত।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Design & Development BY ThemeNeed.Com