শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের ডানপন্থি ও রক্ষণশীল প্রবণতা তীব্রতর হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এই শতাব্দীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম হতে পারে।
ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মেরিন লে পেন একটি শক্তিশালী নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে কোরআন পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সুইডেনে চলছে ব্যাপক সহিংসতা। মধ্যে ও পূর্ব ইউরোপজুড়েই নাৎসিদের কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ভেঙে যাচ্ছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের দীর্ঘ নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য। কারণ দেশ দুইটি ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চিন্তা করছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর পশ্চিমারা মস্কোর সঙ্গে সব বিষয়ে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করবে। এর মাধ্যমে ইউরোপ স্থায়ীভাবে রাশিয়া থেকে বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে। সম্পর্কের পরিবর্তন যে শুধু ভৌগোলিক সীমান্ত বা সামরিক ক্ষেত্রে হবে তা নয়, ধারণা ও আদর্শগতভাবে হবে।
এর মাধ্যমে পুরোনো চিন্তায় ফিরে যেতে পারে ইউরোপ। পশ্চিমা সভ্যতার মূল ধারায় চলে যেতে পারে অঞ্চলটি। একদিকে ইউরোপ রাশিয়ার আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার করবে না, অন্যদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণও বন্ধ করবে না। এর মাধ্যমেই স্পষ্ট হবে আক্রমণাত্মক রক্ষণশীলতা।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে ইউরোপীয় সভ্যতার পতনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা উচিত নয়। কারণ ইউরোপীয়রা বুঝতে পেরেছে যে রাশিয়ান চ্যালেঞ্জটি সত্যিই পশ্চিমা সভ্যতার শক্তিরভিত্তিকে স্পর্শ করেছে।
ইউক্রেনসহ মধ্যে ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে ন্যাটোতে যোগ দিতে বা সদস্যপদ চাইতে বাধ্য করা হয়নি। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইইউকে ময়দানে টেনে নেয়নি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নিজেদের সভ্যতাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ ইউরোপের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না। শত শত বছরের পশ্চিমা সভ্যতা হুমকিতে থাকলে এটি ভেঙে যাবে না। যুদ্ধের পরে এর মতাদর্শ, বিশ্বাস ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ইউরোপীয় ঐকমত্য আরও শক্তিশালী হবে।
প্রত্যেক সভ্যতার একটি বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও মৌলিক পরিচয় থাকে। যেগুলো জাতীয়তাবাদকে টেকসই করতে সাহায্য করে ও এগুলোর কোনো পরিবর্তন হয় না। বাইরের কোনো শক্তি যখন এসব মৌলিকভিত্তিতে আঘাত হানে তখন শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া আসে।