রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১১ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকেই ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে।” শুক্রবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সকাল থেকেই লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকায় মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন ৮ দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ। দুপুর পৌনে ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। পাঁচদফা দাবিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায় নেতাকর্মীদের মাঝে। সমাবেশের সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
বক্তৃতায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
“বিগত ফ্যাসিবাদি সরকার দেশের সবকিছু ধ্বংস করেছে। তারা সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর জুলুম চালিয়েছে। গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহসও তাদের ছিল না। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ এখনো ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। নতুন করে মাথা তুলতে দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের ‘বিপ্লবের’ পরদিন থেকেই কিছু গোষ্ঠী জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও প্রশাসনে অনুপ্রবেশের চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
৮ দলের পাঁচদফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, “ইসলামী দলগুলোর ঐক্য আমাদের জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্টের মতো আন্দোলন গড়ে উঠবে।”
সমাবেশের সভাপতির ভাষণে মাওলানা মামুনুল হক বলেন,
“বাংলাদেশ গরিব-দুঃখী মানুষের রক্তে গড়া দেশ। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। আমরা আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি।”
তিনি দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি ‘হ্যাঁ ভোটের বাক্স’ ভরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন,
“ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পরও এ দেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১-এর পরও বৈষম্য রয়ে গেছে। ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজারো মানুষ প্রাণ দিলেও মুক্তি আসেনি। আবারও চাঁদাবাজ-জামেলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।”
তিনি পরিষ্কারভাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করে যথাসময়ে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন,
“চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ভেদাভেদ ভুলে এই মাটিকে ইসলামের দুর্গে পরিণত করতে হবে। বিদেশিরা এখানে পড়তে আসবে—এমন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য আমাদের।”
সমাবেশে ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি অংশ নেন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ইসলামী দল, জাগপা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি এবং নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশকে ঘিরে লালদীঘির ময়দান ছিল উৎসবমুখর; পুরো এলাকা ছিল ব্যানার, ফেস্টুন ও স্লোগানে মুখরিত। ৮ দল জানিয়েছে, তাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।