রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৪ অপরাহ্ন
মো. সেলিম উদ্দিন খাঁন
ডিসেম্বরের শুরুতে কোমল রোদে ঝলমল করছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন। চারদিকে উৎসবেরঞ আমেজ-দীর্ঘ ১০ মাস পর আবারও দ্বীপে ভিড় জমল পর্যটকদের। নীল দিগন্তজোড়া পানি, তরঙ্গের শব্দ আর মানুষের হাসিতে আবার প্রাণ ফিরে পেল সমুদ্রবেষ্টিত এই দ্বীপটি।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় বহুল প্রতীক্ষিত পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি বার আউলিয়া জেটিঘাটে নোঙর করলে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মাঝে।
কিছুক্ষণের ব্যবধানে পৌঁছয় কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। তিনটি জাহাজে প্রায় ১,২০০ পর্যটক দ্বীপে পা রাখেন। ঘাটে নামতেই স্থানীয়রা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন অতিথিদের।
এর আগে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে রওনা দেয় জাহাজগুলো।
ঘাটজুড়ে ছিল কঠোর নজরদারি—টিকিট যাচাই, কিউআর কোড স্ক্যান, নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে কেউ যেন দ্বীপে প্রবেশ করতে না পারে তার কঠোর মনিটরিং।
দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমানের রেস্তোরাঁয় ছিল না বেচাকেনা। কথা হলে মুখে স্বস্তির হাসি নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ব্যবসা প্রায় বন্ধের মতো ছিল। আজ লোকজন দেখে মনে হচ্ছে সেন্টমার্টিন আবার বেঁচে উঠল।
’প্রবাল সংরক্ষণে কাজ করা তরুণ ওসমান গণি বলেন, ‘আমাদের জীবিকা আসে পর্যটন থেকে; তবে প্রকৃতি রক্ষা করাটাও জরুরি। এবার যে নিয়ম-কানুন আরো শক্ত করা হয়েছে, তাতে পরিবেশ কিছুটা হলেও বাঁচবে।’
ময়মনসিংহ থেকে প্রথমবার দ্বীপে আসা নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘নৌযাত্রা ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা। দ্বীপে নামতেই মনে হলো স্বপ্নের কোনো জায়গায় এসেছি।’
আরেক পর্যটক মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘কিউআর কোড যাচাই, ভ্রমণ পাস—সবই বেশ সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে।
এবার ব্যবস্থাপনা সত্যিই উন্নত।’
নুনিয়ারছড়া ঘাটে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ থেকে দ্বীপে রাতযাপন করা যাবে। সব টিকিট ও ভ্রমণ কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে যাতে পরিবেশের ওপর চাপ না পড়ে। প্লাস্টিক নিষিদ্ধের অংশ হিসেবে বিকল্প এলুমিনিয়াম বোতল দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের দেওয়া ১২ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভলান্টিয়ার দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাট থেকে জাহাজ—সব জায়গায় পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। কেউ বিপদে পড়লে তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
পর্যটকদের ভিড়ে আবারও সরগরম দ্বীপের বাজার, হোটেল, রেস্তোরাঁ। সৈকতে শিশুর হাসি থেকে দম্পতিদের হাঁটাহাঁটি—সব মিলিয়ে ফিরে এসেছে পুরনো প্রাণচাঞ্চল্য।
স্থানীয়রা জানান, দ্বীপে মানুষ এলে তাদের ঘরেও আলো জ্বলে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘জাহাজগুলো কঠোর নজরদারিতে থাকবে; দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। দুই ঘাটেই বাড়তি তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
জানা গেছে, আরো চারটি জাহাজ চলাচলের প্রস্তুতিতে রয়েছে; অনুমতি মিললেই ধাপে ধাপে রুটে নামবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে।
গত ২২ অক্টোবর সরকার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনা অনুযায়ী- নভেম্বর মাসে কেবল দিনভর ভ্রমণ; রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপন করা যাবে। ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না।