বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি:
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ আসিফ খোন্দকার, আইনবিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট ইলিয়াস , যোগাযোগ : ০১৬১৬৫৮৮০৮০,০১৮১১৫৮৮০৮০, ঢাকা অফিস: ৪৩, শহীদ নজরুল ইসলাম রোড, চৌধুরী মল (৫ম তলা), টিকাটুলি ১২০৩ ঢাকা, ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশ মেইল: bdprotidinkhabor@gmail.com চট্টগ্রাম অফিস: পিআইবি৭১ টাওয়ার , বড়পুল , চট্টগ্রাম।

মানুষ-হাতি সংঘাত নিরসন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় প্রশংসনীয় ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা,মেহরাজ উদ্দীন

মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ
কর্মকর্তা,মেহরাজ উদ্দিনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়! তিনি বলেন বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে হাতি মারা যায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বিট কাম চেক ষ্টেশন ও কাকারা বিট যৌথ অভিযানে বন্যহাতির চলাচলের এলাকা থেকে প্রায় ২২০০শ. গজ জিআই তার জব্দ করা হয়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ বিটের সঙ্গীয় স্টাফ ও সিপিজি সদস্যসহ ঘোনারপাড়া,
হাঁসেরদিঘী, ছাইরাখালী, ছিড়াপাহাড়, দরগাহ গেট, নতুন মসজিদ, গাবতলী বাজার, মুসলিম নগর, ফতিহারঘোনা, নোয়াপাড়া, গুচ্ছগ্রাম,আবুলের ঘোনা, ঘুনিয়া, পেতাইন্যারছড়া ও বিট সংলগ্ন কুমাড়ী বাজার, আড়াইমাইল এলাকায় মাইকিং করা সহ মানুষকে বিভিন্নভাবে হাতিকে আক্রমণ, ঢিল ছোড়া ও আবাদি জমিতে বৈদ্যুতিক শক না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান বন্য হাতি, বন্যপ্রাণী, বনজদ্রব্য, বনভূমি রক্ষার্থে বন বিভাগ সদাই সজাগ রয়েছেন বন বিভাগ। হাতীর নিরাপদ আবাস্থল, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, পশু শিকারীর হাত থেকে হাতী রক্ষা, হাতীর আক্রমণ থেকে জীবন রক্ষা, ফসলের ক্ষতি, বসতবাড়ীর সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাতদিন কষ্ট করে যাচ্ছে বন বিভাগ! রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বুনো হাতির খাবারের উৎস দিন দিন কমছে। এ ছাড়া বনে মানুষের বাস ও আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় হাতির নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। এ জন্য হাতি খাবার খুঁজতে খুঁজতে পাহাড় ছেড়ে লোকালয়ে নেমে এসে মানুষের বাধার মুখে পড়ে। তারা বাধা পেয়েই তারা ফসলের মাঠ, মানুষের বসতঘরে তাণ্ডব চালায়। একপর্যায়ে হাতির দল বুনো আচরণ শুরু করে। এই প্রেক্ষাপটে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের জান-মাল রক্ষায় বুনো হাতির ওপর হিংস্র হয়ে ওঠে মানুষ। ফলে মানুষের সাথে হাতির দ্বন্দ¦ লেগেই আছে। এজন্য হাতির হাত থেকে নিজেদের ও হাতিকেও রক্ষার জন্যে সচেতনতা জরুরী।

যাতে লোকালয়ে এলেও তাদের ওপর কেউ কোনো অত্যাচার না করে। হাতি যাতে নিরাপদে গভীর জঙ্গলে ফিরে যেতে পারে। এতে হাতিও থাকবে, মানুষও থাকবে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, বন্যপ্রাণী ও বন্যহাতি সংরক্ষণ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বিচারে বন্য প্রাণী হত্যা, ধরা এবং শিকার করা যাবে না। বন্য হাতিদের আঘাত করে নিধন করলে প্রকৃতির ভারসাম্যে বিরাট প্রভাব ফেলবে। সামাজিকভাবে সচেতন হয়ে আমাদের মানুষ ও হাতি সংঘাত নিরসন করে বন্য প্রাণী ও হাতিদের বাঁচাতে এগিয়ে এসে বন সম্পদ রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।তিনি আরো বলেন, বন্যহাতি লোকালয়ে চলে আসলে তিনি বন বিভাগকে অবগত করার অনুরোধ জানান। তবুও যেন হাতিকে আক্রমণ করা না হয়। হাতি রক্ষায় আমরা বনের ভেতর সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় জাতের বৃক্ষ রোপণ করছি। যাতে খাবারের অভাবে হাতি লোকালয়ে না আসে। যাতে হাতি বনের মধ্যে নিরাপদে সেখানে বিচরণ করতে পারে। ইদানীং বুনো হাতির চলাচলের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আগে বুনো হাতি একত্রে দল বেঁধে চলাফেরা করত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি-দুটি হাতি দলছুট হয়ে চলাফেরা করছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মানুষ ও হাতির সংঘাত নিরসন এবং বনজসম্পদ, বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং বনভূমি জবরদখলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি। সরকারি বনভূমি জবরদখলমুক্ত, বন্যপ্রাণী, ও বন্যহাতিদের সংরক্ষণ এবং বনজসম্পদ রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জানা যায় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ২৭ কিলোমিটারজুড়ে হাতির তিনটি বিচরণক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে গেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বন্যপ্রাণীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে।দেশের বিভিন্ন অভয়ারণ্য এলাকায় হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর ওপর আক্রমণের খবর আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উন্নয়ন, লোভ ও অপরিণামদর্শিতার কারণে মানুষ অভয়ারণ্যগুলো জনারণ্যে পরিণত করছে। দেশজুড়ে ক্রমশ অভয়ারণ্যের পরিমাণ কমছে। সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও কমে আসছে।

দাঁত সংগ্রহ, খেলা দেখানো, চাঁদা তোলা কিংবা চিড়িয়াখানায় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হাতি শিকার ও জব্দ করার ঘটনা ঘটছে। এতে হাতির স্বাভাবিক প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন অভয়ারণ্যে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করছে। সবজি ক্ষেতের চারপাশে অত্যন্ত সূক্ষ্ম জিআই তারের বেড়া দিয়ে জেনারেটরযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে প্রধানত হাতি খাবারের সন্ধানে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যাচ্ছে। ২০২১ সালে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে দুই সপ্তাহে পাঁচটি হাতি মারা যায়। এর বাইরে একটি হাতির মাথায় গুলিও পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া জ্বলন্ত বর্শা ছুড়েও হাতি শিকারের ঘটনা ঘটে।
এই মুহূর্তে সারাবিশ্বে এশিয়ান হাতির সংখ্যা আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ হাজার। হাতি সংরক্ষণে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস পালন করা হলেও বিশেষ কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। হাতি হত্যায় মামলা-মোকদ্দমার সুযোগ থাকলেও কোনো কার্যকর নিষ্পত্তি এখনও দেখা যায়নি।

শহর, গ্রাম কিংবা বন্যপ্রাণী এলাকায় আমাদের নীতিগুলো প্রায় ক্ষেত্রে পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব হয়নি। অথচ সারাবিশ্ব এখন জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষায় জোর দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিজগৎ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশ সুরক্ষার বিকল্প নেই। হাতি সংরক্ষণে এখনই শক্তিশালী পদক্ষেপ না নিলে প্রাণিবিশারদরা বাংলাদেশ হাতিশূন্য হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Design & Development BY ThemeNeed.Com