শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি:
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ আসিফ খোন্দকার, আইনবিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট ইলিয়াস , যোগাযোগ : ০১৬১৬৫৮৮০৮০,০১৮১১৫৮৮০৮০, ঢাকা অফিস: ৪৩, শহীদ নজরুল ইসলাম রোড, চৌধুরী মল (৫ম তলা), টিকাটুলি ১২০৩ ঢাকা, ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশ মেইল: bdprotidinkhabor@gmail.com চট্টগ্রাম অফিস: পিআইবি৭১ টাওয়ার , বড়পুল , চট্টগ্রাম।
সংবাদ শিরোনাম:
চট্টগ্রাম-আদালতের নথির বস্তা মিলল ভাঙারির দোকানে চকরিয়ায় -জমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষ’পরিবেশ বিপর্যয়ে তামাক-এর নেতিবাচক প্রভাব: প্যারাবনে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮‌মামলায় নাম নেই সন্দেহজনক আটক পিতা-পুত্র আনোয়ারার বটতলী ইউনিয়নের এমবিএম ইটভাটার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা চকরিয়ার বদরখালীতে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় গত ৩০ ঘন্টায় থানা পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ৭ জন আটক নওগাঁর মহাদেবপুর ১৩ মাইল মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন কলেজ ছাত্রের মৃত্যু বৈদ্যুতিক ফাঁদে গর্ভবতী হাতির মৃত্যু, সঙ্গী হাতির প্রতিশোধে কৃষক নিহত লামায় অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান : ২ অবৈধ ইট ভাটায় ৪ লাখ টাকা অর্থদণ্ড তিন মিনিটে যমুনা রেল সেতু পাড় ১২০ কি:মি গতিতে, সারাদিনে ট্রেন চলবে ৮৮টি! বসুন্ধরা চক্ষু চিকিৎসা পেলেন শরীয়তপুরের এক হাজার মানুষ

চকরিয়ায় -জমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষ’পরিবেশ বিপর্যয়ে তামাক-এর নেতিবাচক প্রভাব:

মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বির্স্তীণ জমিতে এ বছরও পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষ হচ্ছে। প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরের সঠিক তদারকি না থাকায় টোবাকো কোম্পানীগুলো একশ্রেণির চাষীদের নানা প্রলোভনে ফেলে তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। উপজেলার অন্তত আটটি ইউনিয়নে ফসলি জমির পাশাপাশি পাহাড়ি জনপদে তামাক চাষের পরিধি বেড়ে চলছে।পরিবেশ সচেতন মহল অভিযোগ তুলেছেন, প্রতিবছর যেভাবে চকরিয়া উপজেলাজুড়ে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন বেড়ে চলছে তাতে দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। এতে ধানসহ রকমারি ফসল উৎপাদনে অদুর ভবিষ্যতে বড়ধরণের অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে। চকরিয়া-কক্সবাজার অঞ্চলে তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার কর্মসুচি বাস্তবায়ন করছেন এনজিও সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)। সংস্থাটির কক্সবাজারের সমন্বয়ক মো.জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চকরিয়া উপজেলাসহ কক্সবাজার অঞ্চলে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদারে কাজ করছি। বিশেষ করে তামাক চাষ অধ্যুষিত এলাকার জনগণ তথা চাষীদেরকে এই চাষ থেকে সরে আসতে নিরুৎসাহিত করছি। কারণ তামাক চাষের কারণে যেমন জমির উর্বরতা শক্তি লোপ পায়, ওইজমিতে আর ভালোমানের ফসল উৎপাদন হয় না, তেমনি তামাক চাষের ফলে চাষী এবং আশপাশের লোকজন নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, টোবাকো কোম্পানীগুলো একশ্রেণির চাষীদের নানা প্রলোভনে ফেলে তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। এতে ফসলি জমির পাশাপাশি পাহাড়ি জনপদে বনবিভাগের দখলে নেওয়া জমিতেও তামাক চাষের পরিধি বেড়ে চলছে। এখন প্রতিবছর যেভাবে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন বেড়ে চলছে তাতে দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। এতে ধানসহ রকমারি ফসল উৎপাদনে অদুর ভবিষ্যতে বড়ধরণের অশনি সংকেত দেখা দেবে। সরেজমিনে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনা লে এবং মাতামুহুরী নদী তীরের বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ খাস জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত এনজিও সংস্থা উবিনীগ ও একলাবের চকরিয়ার মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবছর উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। আর এসব তামাক পোড়াতে বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে কয়েক হাজার তামাক চুল্লি নির্মাণ কাজও চলছে।সংস্থা দুটির গবেষণা কর্মকর্তাদের ধারণা, টোব্যাকো কোম্পানী গুলোর লোভনীয় ফাঁদে পড়ে কৃষকরা তামাক চাষে নেমেছে। এভাবে প্রতিবছর তামাক চাষের পরিধি বাড়তে থাকায় উপজেলার আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে করে চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা। আগামীতে এ উপজেলায় চরম খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে বলে গবেষণা কর্মকর্তাদের দাবি।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা – বলেন, ‘সরকারিভাবে তামাক চাষ বন্ধে এই পর্যন্ত কোনধরণের দিক-নির্দেশনা নেই। এরপরেও তামাকের ভয়াবহতা অনুভব করে আমরা চেষ্টা করেছি। নানা কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তামাক চাষীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। এক্ষেত্রে তামাক চাষীদেরই বেশি সচেতন হতে হবে। মুলত চাষীরা সচেতন হলে বিকল্প চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। অন্যথায় আবাদি জমি কমে গেলে ফসল উৎপাদন তথা নিরাপদ খাদ্য ভান্ডার নিশ্চিতে বড়ধরণের বিপর্যয় দেখা দেবে। ‘তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’। তামাকের উৎপাদন ও ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যহানী ঘটায়। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সচেতন ও সোচ্চার হলেও এটি যে পরিবেশের জন্য কতোটা হুমকী সেটা আমাদের আলোচনার বাইরে থেকে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতিবছর তামাক চাষের জন্য প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি ধ্বংস হয়। তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য বছরে ২ লক্ষ হেক্টর বন উজাড় হয় এবং মাটিতে ক্ষয় সৃষ্টি করে। তামাক উৎপাদন পানি, জীবাস্ম জ্বালানী ক্ষয় করে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেটের বাট যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকে। ফলাফলে ১.৬৯ বিলিয়ন পাউন্ড বিষাক্ত বর্জ্য তৈরি করে এবং হাজার হাজার রাসায়নিক বায়ু, পানি ও মাটিতে নিঃসরণ করে।
প্রতি বছর ৮৪ মেগাটন কার্বণ ডাই অক্সাইডের সমান গ্রীণ হাউস গ্যাসের সাথে সাথে তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। জলবায়ুর স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করে, সম্পদ নষ্ট করে এবং একইসাথে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করে। তামাক উৎপাদন ও ব্যবহারে পরিবেশের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে সেটি ‘পৃথিবী’ নামক গ্রহটির স্থায়ীত্বকাল ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। পরিবেশের উপর এই নেতিবাচক প্রভাব চুড়ান্তভাবে শুধুমাত্র মানব স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে তাই নয়, এটা পৃথিবীতে বাস করা সকল প্রাণীকূলকে ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসাবে ভূমিকা রাখছে! তামাক চাষে যে ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলি এতোটা বিষাক্ত যে সরাসরি মানব দেহে প্রবেশ করে ক্ষতি করছে একই সাথে বাতাসে মিশে পুরো জীববৈচিত্র্যকেই অসুস্থ করে তুলে। যার জন্য এটা সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ে একটা বড় ধরণের নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। সাধারণভাবে যে কীটনাশকগুলি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে রয়েছে ইমিডাক্লোপ্রিড, ক্লোরপাইরিফস, ডাইক্লোরোপ্রোপেন, অ্যালডিকার্ব, মিথাইল ব্রোমাইড। এগুলি প্রত্যেকটি মানবদেহের ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫ মিলিয়ন কীটনাশক বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার কর্মী কীটনাশকজনিত বিষক্রিয়াতে মৃত্যু বরণ করে! তামাকের পরিবেশের উপর এমন নেতিবাচক প্রভাবকে আড়াল করার জন্য তামাক কোম্পানীগুলি ‘গ্রীনওয়াস’ নামে বিশ্বব্যাপী একটি কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিএসআর এর নামে তারা বৃক্ষরোপণ, সমুদ্র সৈকত পরিস্কার, বিশুদ্ধ পানি বিতরণ এধরণের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সমস্ত কাজে তারা একটি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু যেটি তারা ক্ষতি করে তার তুলনায় এটি কিছুইনা। বস্তুত পরিবেশকে বিপর্যস্ত করা এবং মানুষের মৃত্যু কোনটির ক্ষতিই টাকা দিয়ে নিরুপন করা সম্ভব নয়। তামাক যেভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে এটার জন্য পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের সরকারকেও বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ধারণা করা হয় বিশ্বব্যাপী এই ব্যয়ের পরিমাণ ট্রিলিয়ন ডলার! বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি জাতের তামাক চাষ হচ্ছে।

এগুলি হলো ভার্জিনিয়া, মতিহারি ও জাতি। বিবিএস এর কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ-২০২০ এর তথ্যানুসারে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জাতি চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৬০.৭৫ একর জমিতে; উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৮২০.৬৭ মেট্রিক টন। মতিহারি চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৮০৬ একর জমিতে; উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৯৭৪.০৩ মেট্রিক টন। ভার্জিনিয়া চাষ হয়েছে ৭০ হাজার ৩৩৯.২০ একর জমিতে; উৎপাদন হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৮.০৬ মেট্রিক টন।

অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মোট ১ লাখ ৬০ একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য এটা ভয়াবহ তথ্য। তামাকের এই চাষ পরিবেশের উপর মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। এটা শুধুমাত্র জমির হিসাব। এর সাথে যুক্ত হবে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ সময়ের ক্ষতি, ব্যবহারকালীন ক্ষতি এবং সর্বশেষ বর্জ্য থেকে।

একদিকে পরিবেশ আর অন্যদিকে তামাকজাত দ্রব্য ব্যহারের ফলে সরাসরি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলাফল দুই মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি। কোন ফসল ও দ্রব্যের দ্বারা এতো বহুমুখী ক্ষতি সাধিত হয়না যা তামাকের মাধ্যমে ঘটে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Design & Development BY ThemeNeed.Com