বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন
খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল :
যমুনা নদীর উপর নবনির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতুর ব্রডগেজ লাইন দিয়ে টানা ৩দিন দ্রুত গতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
গত রোববার থেকে মঙ্গলবার টানা ৩দিন সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুটি ইঞ্জিন ৪টি করে বগি নিয়ে ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ লাইনের উপর দিয়ে চলাচল করেছে। ১২০ কিমি. গতিতে যমুনার রেল সেতুতে ট্রেন চালিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হলেন এল এম মো: রবিউল ইসলাম, এ এল এম আরিফুর রহমান এবং ট্রেন পরিচালক- পলাশ হোসেন।
ট্রেন দুটি আপ ও ডাউন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর প্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত সিরাজগঞ্জে দিনভর চলাচল করেছে। তাছাড়া পুর্নাঙ্গভাবে সেতুটি চালু হলে সারাদিনে মালবাহী ও যাত্রীবাহী মোট ৮০ থেকে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে জানান রেলসেতু প্রকল্পের মুখ্য প্রকৌশলী। এর আগে ২৬ নভেম্বর ৪০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সেতু কনসালটেন্ট টিমের সাবস্ট্রাকচার ইন্জিনিয়ার মোঃ রবিউল আলম বলেন, “প্রথমে ৪০ ও পরে ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রায়াল ট্রেন চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েনি। আগে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ২০-২৫ মিনিট লাগছে, নতুন সেতু দিয়ে মাত্র তিন থেকে চার মিনিট সময় লাগবে সেতু পার হতে। আশা করি ফেব্রুয়ারি মাসেই সেতুটি উদ্বোধন করা হবে।
যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, সেতুটির কাজ পুরোপুরি শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের যমুনা রেলসেতুর ব্রডগেজ লাইন দিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে দুটি ট্রেন পাশাপাশি চলাচল করেছে। সপ্তাহ খানেক পরে মিটারগেজ লাইনেও ট্রায়াল ট্রেন চালানো হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন হবে।
তিনি আরো বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার সময় রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। সেতুটিতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা এখন সেটিই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে ট্রেন চালানোর মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপর যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটতে থাকে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়ে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে তৎকালীন সরকার যমুনা নদীর উপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮১ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যমুনা নদীর উপর নির্মিত সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ নাম দিয়ে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডবল লাইনের এই সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।
নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি-জাইকা।
জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন প্রতিষ্ঠান মিলে তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণ কাজ করছে।
সম্প্রতি অর্ন্তবর্তী সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’র নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেলওয়ে সেতু’ নামকরণ করেছে।
বর্তমানে পূর্বের যমুনা সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন রেল সেতু চালু হলে দুই লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহীসহ ৮০ থেক ৮৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ তৈরি হবে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।