সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইল এলাকায় মৃত আব্বাস মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রি ছৈয়দ হোছাইন অপহরণের শিকার হয়েছেন।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নেমে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ঘরের ভেতরে ঢুকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পাহাড়ে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
স্থানীয় নুর হোসেন বলেন, ‘মাগরিবের পর পাহাড়ি ডাকাতদল এলাকায় নেমে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একজনকে অপহরণ নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিজেরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ বাহারছড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যায় ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর বাড়ি থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি।
তার আগে দিনের বেলায় আরও দুই জনকে ডেকে নিয়ে পাহাড়ে আটকে রেখেছে বলে জানতে পেরেছি।’বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার সাহা বলেন, ‘ফাঁকা গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে সহকারে দেখছি। এ ছাড়া অপহৃতকে উদ্ধারেও অভিযান চলমান রয়েছে।’
উল্লেখ্য, টেকনাফে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ৩০ জন অপহরণের শিকার হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও মুক্তিপণ দিয়ে ২৬ জন ফিরে এলেও এখনও চার জন অপহরণ চক্রের কবলে রয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মুদিদোকানি জসীমের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং সাঁড়াশি অভিযানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টেকনাফের এসব পাহাড়ি এলাকায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ১০-১২টি ডাকাত গ্রুপের অন্তত দেড় শতাধিক ডাকাত সদস্য এসব অপহরণ বাণিজ্যে জড়িত।
তাদের হাতে রয়েছে, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র। অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে বা কোনোমতে উদ্ধার করাই শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই ডাকাতদের হাতে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে গেলেও স্থায়ী সমাধান মিলছে না।
এতে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের এক সদস্য বলেন, ‘অপহরণের ভয়ে এই এলাকার লোকজন সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হন না। গত পাঁচ মাসে আমার এলাকায় অর্ধশতাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন বেশিরভাগ। হত্যার ভয়ে অপহরণের শিকার লোকজন থানায় যেতে চান না।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অপহরণের অধিকাংশ ঘটনার রহস্যভেদ করতে পারছে না পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা শুধু অপহরণের ঘটনা ঘটলে কিছুটা তৎপরতা দেখায়।
ঘটনার পর তদন্তে বা অপরাধীদের গ্রেফতারে কোনও অগ্রগতি থাকে না।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃতদের অবস্থান জানার চেষ্টা করে পুলিশ।
আমরা গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৮ জন অপহৃতকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ২০টি মামলায় বেশ কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
কক্সবাজার র্যাব–১৫–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘দুর্গম পাহাড়ে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযানে অনেককে গ্রেফতারও করেছে র্যাবের আভিযানিক দল।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দীর্ঘ অভিযানে বনে অপহৃত ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’