শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মাধ্যমিকে চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ বই পৌঁছেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
এছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চাহিদা ২৮ শতাংশ বই পৌঁছেছে।চট্টগ্রাম নগরীর কলেজিয়েট স্কুলের মাধ্যমিকে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেহানা আক্তার মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো নতুন বই হাতে এসে পৌঁছেনি।
কখন আসবে, সে তথ্যও আমাদের কাছে নেই।”একই সময়ে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুল হাসান চৌধুরী বলেন, “প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কিছু বই পাওয়া গেছে। এর বাইরে ষষ্ঠ শ্রেণির ৭টি করে ৫৭৫ সেটে বই মোট ৪,০২৫টি এবং দশম শ্রেণিতে তিন সেট মোট ১,২০০ বই পাওয়া গেছে।”
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া হয়েছে। ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেরিতে বই পৌঁছাচ্ছে।
এছাড়া, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে এক যুগ আগে তৈরি পুরোনো শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন করা হয়। এজন্য এবার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করে এনসিটিবি। পাঠ্যবইয়ের গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতাসহ কিছু বিষয়বস্তু বাদ দেওয়ার পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুস্থান পাচ্ছে। এবার জেলায় জেলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান যতটুকু ছাপাচ্ছে, ততটুকু বই থানা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্কুলে স্কুলে পৌঁছানো হচ্ছে।২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই বই পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশে উৎসব রেওয়াজ শুরু হয়। তবে গত কয়েক বছর পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। তখন ডিসেম্বরের মধ্যে অর্ধেক বই চলে আসত এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে– বছরের প্রথম দিন ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তিনটি করে বই পৌঁছে যাবে। এসব শ্রেণির আরও পাঁচটি করে বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে এবং বাকি বইগুলো ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থী হাতে পাবে। শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৬৬ এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে ৬৩টি। জেলায় দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে ১২৭টি, আলিম ৩৬টি, ফাজিল ৬৪টি ও কামিল ১৯টি। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন। সবমিলে প্রায় এক কোটি ৭৪ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে এবার।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন, “ষষ্ঠ শ্রেণির ও মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ৩টি করে মোট ৩ লাখ ৭৭ হাজার পাঠ্যবই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক, ইফতেদায়ী, এসএসসি, ভোকেশনাল, ইংরেজি মাধ্যমসহ মাধ্যমিকে মোট চাহিদা রয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ। আমি আজ ছাপাখানায় গিয়েছি।
সপ্তম ও নবম-দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত বই ছাপানো হচ্ছে। আশা করছি, জানুয়ারি মাসের মধ্যে সবগুলো পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।”জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুর রহমান বলেন, “প্রতিদিনই বই ছাপানো হচ্ছে। এ বছর জেলায় প্রাথমিকে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ৪৪ লাখের বেশি। এরমধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত বই এসেছে ১১ লাখ ৮৭ হাজারের মতো।” “সবকটি উপজেলায় বই পাঠানো হয়েছে আজ। শুধু ফটিকছড়ি উপজেলার বই পৌঁছাতে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আপাতত পাশের উপজেলার সঙ্গে সমন্বয় বরতে বলা হয়েছে। আশা করছি, জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব বই এসে যাবে,” যোগ করেন তিনি।