শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হকার, ভিক্ষুক ও টোকাই ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা।
এ কারণে দারুণভাবে বিরক্ত হতে হচ্ছে সৈকতে আসা পর্যটকদের। ভিক্ষুক ও টোকাইয়ের হাতে প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন তারা। ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযান চালালেও দিন দিন বেড়েই চলেছে তাদের উৎপাত ।
এ জন্য যৌথভাবে স্থানীয় প্রশাসনসহ আরো কার্যকর উদ্দ্যেগ নিতে হবে। ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যাপক মিলন তালুকদার বলেন, আমি ৩ দিনের ছুটিতে স্বপরিবারে কক্সবাজার এসেছি।
প্রথম দিন দুপুরে বীচে গোসল করতে নেমেই বেশ কিছু বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। সেটা বাদ দিলেও সন্ধ্যার পরে সৈকতে চেয়ার নিয়ে বসেছি স্ত্রীসহ একটু নিরিবিলি সময় কাটাবো বলে, কিন্তু আমি হিসাবে করে দেখেছি ১ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১৫ জন হকার, ভিক্ষুক ও ফেরীওয়ালা এসেছে। তার মধ্যে সব চেয়ে বিব্রতকর হচ্ছে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা চাইতে এসেছে ৩ দল। তারা বিভিন্ন মাদ্রাসার জন্য সৈকতে বসা নারীদের কাছে কিভাবে চাঁদা চায় এটা আমার মাথায় আসেনা। আবার ভিক্ষুক এসেছে ৫/৭ জন। এছাড়া চিপস, ডিম, চা কফি, পান-সিগারেট সহ অনেক ধরনের ফেরীওয়ালা তো আছেই। আমার মতে এটা খুবই বিব্রতকর। শেষে স্ত্রী বিরক্ত হয়ে রুমে ফিরে গেছে। জামালপুর থেকে আসা ডিস (ক্যাবল) ব্যবসায়ি পর্যটক তারেক মাসুদ বলেন, আমি ছাত্র জীবনে একবার কক্সবাজার এসেছিলাম। এখন পরিবার নিয়ে এসেছি কিছু একান্ত সময় কাটানোর জন্য। বিখ্যাত এই সমুদ্র সৈকতের ব্যবস্থাপনা আরো সুন্দর হওয়া দরকার। এখানে কেউ কারো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হচ্ছে না। সৈকত জুড়ে এত দোকান, বিভিন্ন রকমের হকার, টোকাই শ্রেণির ছেলে এবং ভিক্ষুকের দৌরাত্ম সীমাহীন বেশি বলে মনে হয়েছে।
বিশেষ করে কিছু নারী ভিক্ষুক একেবারে নাছোড় বান্দা, আবার কিছু কিশোর ছেলেমেয়ে আছে, তারা পর্যটকদের রীতিমত গালাগালি করে। আমার মতে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা ট্যুরিস্ট পুলিশের এসব বিষয়ে আরো যত্নবাদ হওয়া দরকার।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রধান সড়ক ধরে বীচের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুজন ভিক্ষুক এসে টাকা চায়। টাকা না দেওয়ায় কাপড় ধরে রাস্তা আটকিয়ে দেয়? তাদের হাতে এক প্রকার লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। এ সময় একটি অল্প বয়সি মেয়ে আমার স্ত্রীকে একটি বাজে গালি দিয়ে দৌড়ে চলে গেছে। আমি যেহেতু আঞ্চলিক ভাষা বুঝি তাই গালিটি বুঝতে পেরেছি। যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
সেই থেকে মনটা এত খারাপ হয়ে গেছে বুঝাতে পারছি না।হাজার হাজার টাকা খরচ করে কক্সবাজারে পর্যটকরা বীচে গালি শুনার জন্য আসে না। এগুলো বন্ধ করা দরকার। আলাপকালে কয়েকজন বীচ কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে কয়েকশত হকার, ভিক্ষুক, টোকাই এবং হিজড়া ঘুরে বেড়ায়।
এখানে কিছু কিশোর ছেলেমেয়ে আছে তারা ভিক্ষা চেয়ে না পেলে পর্যটকদের মারাত্মকভাবে গালিগালাজ করে, আবার কিছু হুজুর আসে চাঁদা নেওয়ার জন্য। আসলে আমরা বীচে দায়িত্ব পালন করি ঠিক আছে কিন্তু এদের কিছু বললে আবার কিছু নেতারা চলে আসে আমাদের সাথে ঝামেলা করে।
আবার পুলিশও কিছু বলে না। তাই আমরাও কিছু করিনা। এব্যপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, সৈকতে হকার, ভিক্ষুক, টোকাই শ্রেণির কিছু ছেলেমেয়ে অনেক দিন ধরেই আছে এটা সত্য।
আমরা (পুলিশ) গেলে তারা চলে যায়, আমরা সরে গেলে আবার আসে। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। কারন আমাদের শাস্তি দেওয়ার কোন বিধান নেই। তবুও পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হন সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।