শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এখন যেন পা ফেলারও জো নেই, রাত-দিন সমানে লাখো পর্যটকে ভরপুর থাকছে কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকত এলাকা।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ ডিসেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নামে।
গত বুধবার পর্যন্ত ১৩ দিনে অন্তত ১৬ লাখ পর্যটক সৈকত ভ্রমণ করেছেন। গত বুধবারও শহরে অবস্থান করেন দেড় লাখের মতো পর্যটক।
শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট, কটেজের কোনো কক্ষ খালি নেই জানিয়ে আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউসে দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৪০ হাজার। এখন একটি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঁচ-সাতজন করে থাকছেন।
কক্ষভাড়ার বিপরীতে হোটেলমালিকদের দৈনিক আয় হচ্ছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। ১৩ দিনে আয় হয়েছে ১৬৯ কোটি টাকা।
কক্ষভাড়ার বিপরীতে এখন কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।হোটেলমালিকদের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত তিন লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটছে। এরপর ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইট পর্যন্ত আরও চার দিনে সৈকত ভ্রমণে আসবেন অন্তত চার লাখ পর্যটক।
এ সময়ের জন্যও শহরের শতভাগ হোটেল কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। হোটেলমালিকেরা জানান, বছরের শেষ ছয় দিনে আরও ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, ভারতে যেতে ভিসা প্রতিবন্ধকতা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণে নিরাপত্তাসহ নানা সংকটের কারণে এবার বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারমুখী।
এ কারণে শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হয়ে উঠেছে। গত ১৩ দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁ, শুঁটকি, সামুদ্রিক মাছ, শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি পণ্যসহ পর্যটনের ১৩টি খাতে অন্তত ৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
বছরের অবশিষ্ট দিনগুলোতেও সৈকতে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকবে।গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, পাঁচ কিলোমিটারে লাখো পর্যটক।
কেউ বিচ বাইকে, কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে এদিক-ওদিক চক্কর মারছেন। কেউ দ্রুতগতির জলযান জেটস্কি নিয়ে গভীর জলরাশি ঘুরে আসছেন।
বেশির ভাগ পর্যটক সমুদ্রের কোমরপানিতে নেমে গোসলে ব্যস্ত। পর্যটকদের বসে সমুদ্র দর্শনের জন্য পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে বসানো হয় দুই হাজারের বেশি চেয়ার-ছাতার কিটকট। কোনোটি খালি নেই। একটি কিটকটে বসে সমুদ্র দেখছিলেন ঢাকার বাড্ডার ব্যবসায়ী ইবনে আমিন। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই মেয়ে।
ইবনে আমিন (৪৫) বলেন, সমুদ্রের লোনা জলে গোসল এবং সূর্যাস্ত দেখতে তাঁরা কক্সবাজার ছুটে আসেন। তবে ভিড়ের কারণে সময়মতো সবকিছু ঘুরে দেখা হয়ে উঠছে না। কারণ, শহরের প্রধান সড়কগুলোতে তীব্র যানজটে পড়তে হচ্ছে।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগমের কারণে শহরের বাইপাস, কলাতলী সৈকত সড়ক ও ডলফিন মোড় এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পর্যটকবাহী ছয়-সাত হাজার যানবাহনের (বাস, মাইক্রো, কার-জিপ) সঙ্গে স্থানীয় আরও আট-নয় হাজার ইজিবাইক-অটোরিকশা যুক্ত হয়ে ছোট্ট শহরে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
যানজট নিরসনে কাজ করছেন ৬০ জন পুলিশ।দেখা গেছে, সৈকতে গোসল সেরে পর্যটকেরা দল বেঁধে ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দিকে। এর এক পাশে সমুদ্রসৈকত, অন্য পাশে পাহাড়সারি। গাড়িতে যেতে যেতে দেখা মেলে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানীর পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত প্রভৃতি স্থানে।
অনেকে ছুটছেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপল্লিতে। বিকেলে আবার সৈকতে নেমে সূর্যাস্ত দেখছেন হাজারো পর্যটক। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা, সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন ট্যুরিস্ট ও ট্রাফিক পুলিশের দুই শতাধিক সদস্য।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে দিন–রাত পর্যটকে ভরপুর থাকছে। এ কারণে সেখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে দিনের বেলায় পুলিশ নিরাপত্তা দিলেও রাতের বেলায় শুধু বিশেষ কিছু স্থানে টহল থাকে। তবে এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।