বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি,রুপম চাকমা
সম্প্রতি রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান ধারশ মনি চাকমা।জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার অনুসিনথিয়া চাকমা বলেন, ‘মনি চাকমা একজন নিভৃতচারী শিল্পী।
নির্জন গোমতীর পাড়ে রোজ নিশিতে-
বাজায় বাঁশি অচিন ভাবে কোন বাঁশরি,
যার বাঁশির সুরে প্রানের টান যায় বেড়ে-
ঘরে থাকা হলো বিষন দায় কি যে করি?
যুগ যুগ ধরে বাঁশির সুর যে মানুষকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষ্ণের বাঁশির সুরে বিমোহিত হয়ে যেমন তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন রাধা, তেমনি জার্মানির হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পও আমাদের জানা। এমনই এক বাঁশিওয়ালা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়া গ্রামের ধারশ মনি চাকমা। তাঁর বাঁশির সুরে বিমোহিত হন না এমন লোক পাওয়া দুষ্কর।
রাঙামাটির সংগীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ মনি চাকমা। বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি আঞ্চলিক শাখার তালিকাভুক্ত বংশীবাদক তিনি। পাহাড়ের বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁকে বাঁশি বাজাতে দেখা যায়।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মনি চাকমা নিজ উদ্যোগে গিয়ে বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি গানও শেখান অনেককে। ২০০৭ সালে ঘাগড়া কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পকর্মে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি তাঁকে একজন শিল্পী হিসেবে সম্মাননা দেয়।
মনি চাকমা বলেন, ‘আমি দীপায়ন চাকমা ও বীর কুমার চাকমার কাছে তালিম নিই। রাঙামাটির গুণী শিল্পী রনজিত দেওয়ানের প্রেরণায় আমি সংগীতসাধনা এবং বাঁশিসাধনা শুরু করি। কখনো অর্থের মোহে আমি সুরসাধনা কিংবা সংগীত পরিবেশন করিনি। পেশা নয়, নেশা হিসেবে আমি সুরসাধনা করে যাচ্ছি।’
আজ আমাদের মাঝখান থেকে বাঁশিসহ দেশীয় অনেক যন্ত্র হারিয়ে যাচ্ছে। পাশ্চাত্য সংগীতের আগ্রাসনে আমরা হারাতে বসেছি নিজস্ব সংস্কৃতি। কিন্তু ধারশ মনি চাকমা এখনো বাঁশির সুর চর্চা করে যাচ্ছেন।’
মনি চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে গণিত বিষয়ে স্নাতক পাস করেন। বর্তমানে তিনি কাউখালী উপজেলার বর্মাছড়ি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।