শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন
চলতি বছরের ১১ জুলাই মিরসরাই ট্রাজেডির ১১ বছক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি ২০১১ সালের ১১ জুলাই সোমবার। গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে এগিয়ে চলছে একটি ট্রাক আর সেই ট্রাকে বিজয় উল্লাস ছিলো শিক্ষার্থীদের পথিমধ্যে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা; নিভে যায় ৪৫ টি তাজা প্রাণ। দেশের ইতিহাসের স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা এটি। ২০১১ সালের ১১ জুলাই ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনার ১১ বছর পূর্ণ হবে চলতি বছর।
ঘটনার দিন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদর স্টেডিয়াম থেকে ফুটবল খেলা দেখে বিজয় উল্লাস করে বাড়ি ফিরতেছিলো উপজেলার আবুতোরাব এলাকার শিক্ষার্থীরা। সেদিন চালকের অদক্ষতায় ট্রাক উল্টে গিঁয়ে সড়কের পাশে ডোবায় পড়ে একসাথে ঝরে যায় ৪৫ টি তাজা প্রাণ;যাদের মধ্যে ৪২ জনই ছিলো শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে দলবদ্ধ হয়ে ট্রাকে করে খেলা দেখতে গিঁয়েছিলো সদর স্টেডিয়ামে রাতে তারা আবার দলবদ্ধ হয়ে ফিরে এসেছিলো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খাটিয়ায় করে লাশ হয়ে নিথর দেহ নিয়ে।
সেদিনের এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় মুহুর্তেই শোকের কালো ছাঁয়া নেমে এসেছিলো মিরসরাই সহ সারাদেশে। ঘোষণা আসে নিহত’দের স্মরণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের।
দূর্ঘটনায় শোকার্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া,তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ দেশি-বিদেশি নানা শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
ট্রাক উল্টে ডোবায় পড়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের সাথে নিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা’র চিত্র জানাতে মিরসরাইতে ছুটে এসেছিলো বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা।
ট্রাজেডি’তে নিহত সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে হতবাক পিতা,পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ শুনে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে পিতার মৃত্যু,দুর্ঘটনা ঘটা সেই ডোবায় নিহতদের লাশ,তাদের জুতা ভেসে থাকা, আবুতোরাব বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জানাযায় খাটিয়া ভর্তী একসাথে এতোগুলো লাশ, স্বজন আর সহপাঠী’দের হারিয়ে নির্ভাক হওয়া মুহুর্তের সেই চিত্র সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সেই চিত্র হৃদয় নাড়া দিয়েছিলো দেশবাসী ও প্রবাসীদের। সেদিন মিরসরাইয়ের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিলো স্বজন’দের আহাজারিতে।
মিরসরাই ট্রাজেডি’তে নিহতদের স্মরণে সৈদালী এলাকার সেই ডোবায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র উদ্যোগে নির্মাণ করে হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’ ও তৎকালীন শিল্প মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার উদ্যোগে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’।
সেদিন যা ঘটে-
মিরসরাই উপজেলা সদর স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলায় বিজয় অর্জন করেমিনি ট্রাকে করে বিজয় ফিরছিল সবাই। পথিমধ্যো বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী নামক স্থানে ট্রাকটি উল্টে ছিটকে পড়ে ডোবায়। মুহুর্তে সেই বিজয় উল্লাস রূপ নেয বিষাদে।দূর্ঘটনার পরপর ডোবার জল থেকে উদ্ধার হতে থাকে নিথর দেহগুলো।সেই বছরের ২৪ নভেম্বর রাত ৯টায় নয়ন শীলের প্রয়াণে ট্রাজেডিতে নিতহের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ জনে।
মিরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতরা হলেন-
তাকিব উল্ল্যাহ মাহমুদ সাকিব, আনন্দ চন্দ্র দাশ, নুর মোহাম্মদ রাহাত, জাহেদুল ইসলাম, তোফাজ্জল ইসলাম, লিটন চন্দ্র দাশ, আরিফুল ইসলাম, উজ্জ্বল চন্দ্র নাথ, তারেক হোসেন, মোহাম্মদ সামছুদ্দিন, মেজবাহ উদ্দিন, ইমরান হোসেন ইমন, কাজল চন্দ্র নাথ, সূর্য চন্দ্র্র নাথ, ধ্রুব নাথ, সাজু কুমার দাশ, আবু সুফিয়ান সুজন, রুপন চন্দ্র নাথ, সামছুদ্দিন, আল মোবারক জুয়েল, ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, আমিন শরীফ, শরীফ উদ্দিন, সাখাওয়াত হোসেন, রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, তারেক হোসেন, নয়ন শীল, জুয়েল বড়ুয়া, রায়হান উদ্দিন, এসএম রিয়াজ উদ্দিন, টিটু জল দাশ, রাজিব হোসেন, আশরাফ উদ্দিন, জিল্লুর রহমান, জাহেদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন পনির, রায়হান উদ্দিন শুভ, মঞ্জুর মোর্শেদ, সাখাওয়াত হোসেন নয়ন, আনোয়ার হোসেন এবং হরনাথ দাশ।