সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন
বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অবকাঠামোর উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। চলমান কাজে ৪০ ভাগ ভর্তুকিসহ বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সরকারি সংস্থার রেট শিডিউল হালনাগাদ করার দাবী ঠিকাদারদের।রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর অব্যাহত দাম বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঠিকাদাগন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত বিভাগ, জেলা পরিষদসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের লাইসেন্সধারী ঠিকাদাররা পুরাতন দর অনুযায়ী পাওয়া কাজ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন।ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীতেও বেড়েছে ধরে রড, সিমেন্ট, পাথর, ইট, বিটুমিনসহ সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রীর দাম। কিন্তু বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামো স্থাপনা, সড়ক, সেতুসহ উন্নয়ন কাজের দরপত্র হালনাগাদ করা হয়নি।
এছাড়া ভ্যাট, ট্যাক্সসহ অন্যান্য বাড়তি ব্যায় করতে হচ্ছে। এতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সকল শ্রেণির ঠিকাদাররা লোকসানের মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে সড়ক, সেতু, বিল্ডিংসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এতে নতুন করে কোন দরপত্রে অংশগ্রহণ করা হতে বিরত থাকছেন অনেক ঠিকাদার।
ফলে এসব কাজ বাস্তবায়নের জন্য পুন:দরপত্র আহবান করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে। দ্রুত নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য সমন্বয় করা না হলে সরকারের উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়াসহ শতাধিক ঠিকাদারকে লোকসান গুনতে হবে। জেলাজুড়ে চলমান উন্নয়ন কাজগুলোতে ৪০ ভাগ ভর্তুকি প্রদানসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেট শিডিউল দ্রুত হালনাগাদ করার দাবি এ জেলার ঠিকাদারদের।
প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারুক ট্রেডার্সের মালিক ফারুক সরকার বলেন, দেড় বছর ধরে রড, সিমেন্ট, বিটুমিন, পাথরসহ সবধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে চলছিল। গত ৬ মাসে এটা অধিক হারে বেড়ে গেছে, যা আমরা ভাবতেও পারছি না। দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা বিপাকে আছি, এরপরও সরকারি দপ্তরের চাপ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু দাম বাড়তির বিষয়ে কোন ভর্তুকির আশ্বাস দিচ্ছেন না।
অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শান্তা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো: খোকন ভূঁইয়া বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার পর প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষায় লোকসানের মুখেও সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন কাজ চালাতে পারবো। করোনার আগে টেন্ডার নেয়ার সময় নির্মাণ সামগ্রীর দাম কম ছিল। পরে করোনা পরিস্থতিতে লকডাউনে সকল প্রকার কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে গিয়ে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির মুখে পড়েছি। এছাড়া শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য খরচও বাড়তি।
মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক রিপন মোল্লা বলেন, তারকাটা থেকে শুরু করে সবধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দামই বেড়েছে। একদিকে উপকরণের বাড়তি দাম, অপরদিকে ভ্যাট ট্যাক্সের চাপ সব সামাল দিতে গিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক ঠিকাদার নতুন করে কাজ নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না। দাম সমন্বয় না করা হলে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হবে। দাম সমন্বয় করার জন্য জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন জেলার ঠিকাদাররা।
যোগাযোগ করা হলে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবুও তারা সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঠিকাদাররা স্মারকলিপির মাধ্যমে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কয়েক বছর পরপর রেট শিডিউল পরিবর্তন করে থাকে। আশা করছি নতুন রেট শিডিউল ঘোষণা হলে সমস্যা সমাধান হবে।