সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন
ক’দিন পরেই রমজান মাস। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩ এপ্রিল প্রথম রোজা। সে হিসেবে রোজা শুরু হতে আর বাকি মাত্র দু’দিন। এরই মধ্যে রোজার হাওয়া লাগতে শুরু করেছে বাজারের নিত্যপণ্যে। সেই হাওয়ায় মসলার বাজার গরম হয়ে উঠেছে। বেড়ে গেছে জিরা, দারুচিনি, এলাচ ও আদার দাম। তবে স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ। রোজা হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি, উল্টো আরও কমেছে। এতে ৩০ টাকা কেজিতেই পাওয়া যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজ।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজধানীর বাসিন্দারা রোজাকেন্দ্রিক কেনাকাটা শুরু করেছেন। অনেকে কেনাকাটা শেষ করেছেন। রোজাকেন্দ্রিক বিক্রি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিরা, দারচিনি, এলাচ, আদা, শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে। গত কয়েকদিনে জিরার দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকার মতো বেড়েছে। দারুচিনির দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। এলাচের দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। একইভাবে আদার দাম ১০-২০ টাকা ও শুকনা মরিচের দাম ২০-২৩০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকার ওপরে কমেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়ার তথ্য দিলেও ভিন্ন কথা বলছেন পাইকাররা। পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোজাকেন্দ্রিক মসলার দাম বাড়ার ঘটনা ঘটেনি। জিরার দাম একমাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। এলাচের দাম বাড়ার বদলে কেজিতে ১০০ টাকার মতো কমেছে। তবে দারুচিনির দাম কেজিতে ৫-৭ টাকা করে বেড়েছে।
তারা বলছেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণে জিরা, দারুচিনি, এলাচের সরবরাহ রয়েছে। এসব পণ্যের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং রোজার ভেতরে এসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও কম। সুতরাং খুচরা ব্যবসায়ীরা যদি এসব পণ্যের দাম বাড়ায় সেটা সঠিক হবে না।
এদিকে গত একমাসে বিভিন্ন সমলার দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে রসুনের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, আদার ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, শুকনা মরিচের ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, জিরার ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, লবঙ্গের ২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ধনের ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।
বিভিন্ন মসলার এমন দাম বাড়লেও গত কয়েকদিনে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এতে খুচরায় এখন দেশে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা ও ভালো মানের আমাদনি করা পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল। এ হিসেবে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে গেছে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী হাজী মাজেদ বলেন, এবার পেঁয়াজের আমদানি হয়েছে অনেক বেশি। এছাড়া ভালো মানের মুড়ি কাটা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, সেই সঙ্গে হালি পেঁয়াজও উঠে গেছে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে। অনিশ্চিত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে এবার রোজার মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং দাম আরও কমলেও কমতে পারে।
প্রায় একই সুরে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজার দাম পড়ে গেছে। ক্রেতারা অস্বাভাবিক আচরণ না করলে রোজার ভেতরে পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে। কিছুদিন আগেই আমরা পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি করেছি। এখন সেই পেঁয়াজ ২৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছি। রোজার ভেতরে পেঁয়াজের দাম আরও ৫ টাকার মতো কমতে পারে।
কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আসাদুর রহমান বলেন, রোজার আগে পেঁয়াজের দাম কমেছে দেখে কিছুটা হলেও অবাক হলাম। সাধারণত রোজার আগে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। এবারও ডাল, বেসনসহ বিভিন্ন জিনিসের দামে বেড়েছে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম কমেছে। রোজার মাসে যাতে আর পেঁয়াজ কেনা না লাগে সেজন্য ১০ কেজি কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি। কিন্তু অন্যান্য জিনিসের দামে তো অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে। মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছরের রোজায় সবাই কষ্টের মধ্যে পার করেছে। করোনার প্রকোপ কমে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম মানুষের সুখ কেড়ে নিচ্ছে। বাজার মনিটরিং বাড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা কমানো গেলে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত।
মসলার বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা দারুচিনির কেজি বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, যা কিছু দিন আগে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে ছিল। এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
একইভাবে দেশি আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। শুকনা মরিচের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
মসলার দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, কয়েকদিন ধরে পাইকারীতে মসলার দাম বাড়তি। রোজার কারণেই এই দাম বেড়েছে। জিরা ও দারুচিনির দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। আদা, শুকনা, মরিচের দামও বেড়েছ। আগামী কোরবানির ঈদের আগে মসলার দাম কমবে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, গত দুই বছর মানুষ ঈদ গেলে সাদা মাঠা। মানুষ খুব একটা কেনাকাটা করতে পারিনি। এবার পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক। মানুষ কেনাকাটাও করছে বেশি। সুতরাং যেসব পণ্যের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে, সেগুলোর দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম।
মসলার দামের বিষয়ে মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাইকারী গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল কে বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা কেন মসলার দাম বাড়িয়েছে, তা আমরা বলতে পারবো না। তবে পাইকারীতে মসলার দাম বাড়েনি।
এক মাস আগে আমরা জিরা যে দামে বিক্রি করেছি, এখনো সেই দামে বিক্রি করছি। কেজিতে এলাচের দাম গত এক মাসে পাইকারীতে এক’শ টাকা কমেছে। তবে দারুচিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। সেটা খুব বেশি না। কেজিতে ৫-৭ টাকার মতো বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমার কাছে মসলার পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। মালের ঘাটতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের হিসেবে রোজার ভেতরে মসলার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। বরং দাম আরও কমলেও কমতে পারে। কারণ করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, আমাদের বিক্রি কিন্তু খুব একটা বাড়েনি।