রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৯ অপরাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
খুন, চুরি, ডাকাতিসহ অপরাধ নির্মূলে কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জেলা পুলিশ, পৌরসভা ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বসানো অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা এখন অকেজো। যার কারণে খুনসহ নানা অপরাধে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কক্সবাজার শহর: অচল সিসি ক্যামেরা, বাড়ছে ছিনতাই
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে থাকা একটি অচল সিসি ক্যামেরা। দিনের সূর্য ডুব দিতেই কুয়াশা আর অন্ধকারে ডুবে যায় পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। দিনের বেলা ঘোরাঘুরির পর সন্ধ্যা নামতেই সৈকতের আশপাশে হেঁটে, গল্প কিংবা আড্ডায় সময় কাটানো পর্যটকদের ভয়ের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ছিনতাইকারী চক্র।
সুযোগ বুঝে চক্রের সদস্যরা মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। জানা গেছে, সড়কে পর্যাপ্ত বাতি ও সিসি ক্যামেরা না থাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ভ্রূক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। আর এতেই দিনের পর দিন বেড়ে চলছে খুন ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। এসব অপরাধীদের শনাক্তে বড় অস্ত্র ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। কিন্তু সেই ক্যামেরাগুলোর বেশির ভাগই গত পাঁচ মাস ধরে অচল। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পুলিশের উদ্যোগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ৬৪টি অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে আরও ১০৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা চালু করে। তখন পুলিশ জানিয়েছিল অপরাধী ধরতে এই নিরাপত্তা জাল সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সময় যত পার হয়েছে, সিসিটিভিগুলো ততই ক্ষমতা হারিয়েছে। ৫৪ পয়েন্টে ১৭০টি সিসিটিভির মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় আছে মাত্র ২০টি। যা দিয়ে পুরো শহরের ওপর নজর রাখা প্রায় অসম্ভব। ২০২৫ সালের শুরুতে ছিনতাইসহ একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলেও সিসিটিভি না থাকায় অপরাধী শনাক্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দীর্ঘ সময় লাগছে। অপরাধী শনাক্ত না হওয়ায় এসব মামলায় তৈরি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার শহরের ডিভাইন রিসোর্টের পাশে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া আবরাহাম বলেন, ‘তিন বন্ধু মিলে সৈকতে আড্ডা দিতে যাই। ফেরার পথে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশে মাস্ক পরা পাঁচজন এসে আমাদের দিকে ছুরি চালায়। তারা আমাদের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাদের বন্ধু তুহিনের পায়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুর্বৃত্তরা খুলনার কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানীকে গুলি করে হত্যা করে।
একই দিন বৃহস্পতিবার সকালে এন্ডারসন রোডে এক এনজিওকর্মী ছিনতাইয়ের শিকার হন। এর আগের দিন ৮ জানুয়ারি শহরের কলাতলি ডিসি পাহাড়ে আল মাহমুদ হক আহাদ নামের এক শিশুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘কক্সবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন জেলায় হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও অপহরণসহ নানা ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন শিল্প ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না।
স্থানীয়দের মধ্যে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নীরবতার সুযোগে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’ জানা গেছে, শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবনী, সী-গাল পয়েন্টসহ মূল শহরের বাজারঘাটা, গোলদিঘির মোড়, বৌদ্ধ মন্দির মোড়, স্টেডিয়াম সংলগ্ন জল্ল্যার মোড়, পাহাড়তলী এলাকার উপসড়কগুলোতে সন্ধ্যার পর ছিনতাই হচ্ছে। সড়ক বাতি বা সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অপরাধীরা সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে।
ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিরোধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ মোড়ে সড়ক বাতি জ্বলে না। অপরাধীরা এর সুযোগ নেয়। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পৌরসভা এবং সড়ক বিভাগকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
পুরো কক্সবাজার শহর ১৭০টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল জানিয়ে জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বেশির ভাগ সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যামেরাগুলো এখনো সচল করা সম্ভব হয়নি।
এতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পয়েন্ট নজরদারির আওতায় আনা যাচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনে তুলনামূলক ছিনতাই কমেছে। অনেক ছিনতাইকারী আটক হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।
তবে সিসিটিভি বা সড়কবাতির জন্য বারবার বলার পরও দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার ফলে অপরাধীরা দ্রুত পার পেয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) ইমরান হোসেন সজীব জানান, অচল সিসিক্যামেরাগুলো যেভাবে সচল করা প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।