বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৭ অপরাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
বান্দরবানের লামা উপজেলায় তামাক ক্ষেতে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে একটি গর্ভবতী হাতির মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনায় মৃত হাতির সঙ্গী পুরুষ হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ফরিদুল আলম ওরফে পুতু মিয়া নামে এক কৃষক। সোমবার রাতে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারীর বিচাইন্নারছড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফরিদুল আলম (৩৮) চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উত্তর ঘুনিয়া পাহাড়তলী এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে। মারা যাওয়া বন্যহাতির বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। সেটি গর্ভবতী ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন লামা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তামাক ও লাউক্ষেত রক্ষা করতে স্থানীয় লোকজন যত্রতত্র বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করছে। সোমবার রাত ১১টার দিকে তামাক ক্ষেতে দেওয়া বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে বন্যহাতিটি মারা যায়।
হাতির মৃত্যুর খবর শুনে তামাক ক্ষেতের মালিক ফরিদুল আলম ঘটনাস্থলে আসছিলেন। এ সময় মারা যাওয়া বন্যহাতিটির সঙ্গী পুরুষ হাতি তাঁকে আক্রমণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
হাতির মৃত্যুর স্থান থেকে ফরিদুল আলমের খামারবাড়ির দূরত্ব মাত্র ৩০ মিটার। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, বিচাইন্নারছড়া এলাকার পাহাড়ের ঢালুতে আবাদি জমির বেশির ভাগই তামাক ক্ষেত। নিহত ফরিদুলের তামাক ক্ষেতের পাশে একটি ডোবার পাড়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ বসানো হয়েছে।
সেই ফাঁদের পাশে একটি গর্ভবতী বন্যহাতির মরদেহ পড়ে রয়েছে। বন বিভাগের সহযোগী এলিফ্যান্ট রেসকিউ টিমের (ইআরটি) সদস্যরা মৃত হাতিটি পাহারা দিচ্ছিলেন।
ওই হাতির শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি জানিয়ে লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আতা এলাহী বলেন, বৈদ্যুতিক ফাঁদেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এটির প্রাথমিক সুরতহাল ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে বৈদ্যুতিক ফাঁদের তার পাওয়া গেছে। সেগুলো বন বিভাগের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপাতত এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আক্রান্ত কৃষকের লাশ মঙ্গলবার সকালে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হাতির মৃত্যুর ঘটনায় বন বিভাগ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে লামা বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতির মৃত্যুর সত্যতা পাওয়া গেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাশাপাশি হাতির আক্রমণে নিহত কৃষক ফরিদুল আলমের পরিবারকে বন বিভাগের বিধি মোতাবেক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।