বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন
মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
বছরজুড়েই নিত্যপণ্যের বাজারে ছিল অস্থিরতা। কখনো অস্বাভাবিক দাম আবার কখনো বাজার থেকে পণ্য উধাও। চাল, আলু, পেঁয়াজ থেকে ডিম, বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের বাজারই ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বেশি দামের কারণে প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। নতুন বছরে বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারক ও করপোরেট কোম্পানিকে জবাবদিহিতায় আনার তাগিদ ভোক্তাদের।বছরের শুরু থেকেই খাদ্যে ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
বেড়েছে বছরের শেষেও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, এপ্রিলে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছালেও বছরের শেষে এটি দাঁড়ায় ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। কোনো কাজে আসেনি সরকারের নানা আশ্বাস। নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল ভোক্তাদের।
জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের বন্যা ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে বাজারে অস্বাভাবিক বাড়ে শাক সবজির দাম। কাঁচামরিচের দামও ছিল চড়া। যদিও বছর শেষে শীত মৌসুমে দাম কিছুটা কমে। বছরের শুরু থেকেই লাগামহীন ছিল আলুর বাজার। মাঝামাঝিতে দাম কিছুটা কমলেও অক্টোবরে আবারও বাড়ে। দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয় এনবিআর। এছাড়া টিসিবির খোলা ট্রাকে বিক্রির পরও আলুর কেজি ৮০ টাকা।
বছরজুড়ে অস্থির ছিল মুরগির ডিমের বাজার। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কিনতে হয় প্রায় ২০০ টাকায়। বিদেশ থেকে আমদানি, অভিযান ও দাম বেঁধে দিলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতেই হিমশিম খেতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘আগে ধরেন ১০ হাজার টাকা বেতন পেয়েছি। সব কেনাকাটার পরেও দেখা যায় যে কিছু রয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ১০ হাজার টাকায় কিছুই হয় না।
ব্যবসা বাণিজ্যেও মন্দা। এর মধ্যে যদি এমন হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’ ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর থেকে বাজারে অস্থিরতা ছিল ব্যাপক। মে মাসে রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর কিছুটা দাম কমলেও জুন-জুলাইতে আবারও দাম বাড়ে। নভেম্বরের শেষে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকলেও আমদানির সুবিধায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
সারা বছর ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও নভেম্বরের শুরুতে বেড়ে যায় খোলা তেলের দাম। বাজার থেকে উধাও বোতলজাত তেল। পরে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হলেও সংকট কাটেনি।
বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে চাল ও চিনিতেও। নতুন বছরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি চায় ভোক্তারা। পাশাপাশি খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির আওতা বৃদ্ধির আহ্বান তাদের। একজন ভোক্তা বলেন, ‘নতুন বছরে সবার জন্য যেন দামটা সহনশীল থাকে।
দামটা যেন বেশি না থাকে। আশা করি ভবিষ্যতে এটা নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার।’দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে আমদানিকারক ও করপোরেট কোম্পানির যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ ক্যাবের।
তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ সংস্থাটির। ক্যাবের সহ সভাপতি এস এম নাজির হোসেন বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা বা তাদের জীবন জীবিকার সাথে যে জিনিসগুলো জড়িত, এগুলোর ক্ষেত্রে সরকার পজিটিভলি এবং ইফেকটিভলি উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা মাঠ পর্যায়ে সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা এখানে তদারকিটা নিশ্চিত হচ্ছে কিনা।’ নতুন বছরে কথায় নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চান ভোক্তারা।