বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপ শুরুর অনুরোধ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনাকে আলোচনার টেবিলের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। আপনি আলোচনা শুরু করুন।’
গতকাল (২৭ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির এই সংসদ সদস্য এ কথা বলেন।এমপি হারুন বলেন, ‘নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এর কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। এছাড়া আমাদের জন্য একটি বিপদ আসন্ন।’
তিনি বলেন সরকারের সমালোচনা করে, ‘স্বাস্থ্যের বেহাল দশা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগ, কেনাকাটা সবকিছুতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের মহোৎসব চলছে। করোনার সময়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এটা পুষিয়ে নিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষা বিভাগ অটোপাস আর অটো ভর্তি দিয়ে চলছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। ঘটনার পর গুজব আর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে দায়সারা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলীয়করণ করা হচ্ছে। মেধা তালিকায় থাকলেও ভিন্ন মতের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেক কথা আছে। এখানে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে সেখানে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।’
‘আন্তর্জাতিক মহল থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও গুম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বিরোধীদলের লাখ লাখ নেতার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তারা নিপীড়নের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের জন্য আইনের প্রয়োগ একরকম আর বিরোধী দলের জন্য ভিন্ন রকম।’
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতির জবাবে বিএনপির এই এমপি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা অসম্পূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি আওয়ামী লীগ কোন কোন সময়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন লবিস্ট নিয়োগ করা কোনো বেআইনি কাজ নয়। অবশ্যই আমি মনে করি বাংলাদেশে যারা বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, যারা গুমের শিকার হয়েছে, নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হচ্ছে কিন্তু যখন দেশে বিচার পাচ্ছি না- এক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব কর্তব্য আছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আমি দাবি জানাতে পারি। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক এজন্য যদি লবিস্ট নিয়োগ করে আমি তাকে সমর্থন দেবো।’
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘সরকার এবং রাষ্ট্র এক নয়। সরকার অনিয়ম করলে তার সমালোচনা হবেই। কিছুদিন আগে আল জাজিরা টিভিতে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে এই সংসদসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ বাইরে প্রটেস্ট করেছে। বলা হয়েছে এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছিল, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু সংসদকে এখনো বিষয়টিতে কি হলো তা নিয়ে অবহিত করা হয়নি। ওই রিপোর্টটি সত্য ছিল না মিথ্যা ছিল তা আজও জানি না।’
’বর্তমান সংসদে থাকা সবগুলো দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছে দাবি করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এই সংসদে যারা আছেন সব কয়টা দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে।তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। তারা কাগজে কলমে বিরোধী দল- এটা তারা নিজেরাই বলেছেন।
বিএনপি করেছে, আওয়ামী লীগ করেছে, জাতীয় পার্টিও এক সময় করেছে। সবাই আমরা আন্দোলন করেছি। আজ (২৮ জানুয়ারি) শুক্রবার আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবির কেন প্রতিবাদ করছেন? কারণ একটি- যদি রাতের আধারে ভোট করে ক্ষমতায় থাকা যায়, যদি বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকা যায়। নির্বাচন আপনাকে অবশ্যই করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার আজকে হারিয়ে গেছে।’
গতকাল (২৭ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সিইসি বলছেন- তিনি রাতের ভোট দেখেননি। এটি একটি অপদার্থ ও মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন। একে নিয়ে কী বলবো? ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের আনুগত্যশীলদের দিয়ে ইসি গঠন হয়েছে বলেই তাদের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো কথা ইসি বলে না। ভোট হচ্ছে না। ভোট চুরি হচ্ছে তারপরও বলছে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’