শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন
নরসিংদীর রায়পুরায় মহান মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক এ স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত প্রয়াত এ কে এম বজলুর রহমান ও শাহানারা বেগম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নরসিংদীর কৃতি সন্তান প্রধানমন্ত্রীর আস্তাবাজন এস এস এফ এর প্রধান মেজর জেনারেল মো: মুজিবুর রহমানের সম্মানে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে নরসিংদীর আলীনগর এ কে এম বজলুর রহমান বাজারে উক্ত ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও পাড়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ¦ ফেরদৌস কামাল জুয়েল সভাপতিত্বে ও প্রভাষক আমজাদ হোসেন এর পরিচালনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসাইন সহ আরো বক্তারা বক্তব্যে এ.কে.এম বজলুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারন করে বলেন, এস এস এফ এর প্রধান মেজর জেনারেল মো: মুজিবুর রহমানের পিতা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনীতিক সহচর, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ ভাষা সৈনিক প্রয়াত এ.কে.এম বজলুর রহমান সু-বক্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে দেশ স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে, রাজনীতিক ,সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার স্বধীনতা পদকে ভ‚ষিত করে সম্মানীত করেছেন।
তার দেশ প্রেম এর সাহসিকতা, অনেক ত্যাগ শিকার করে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে বার বার কারা বরণ করেন। এলাকার গুনীজনদের সর্ম্পকে সঠিক তথ্য তুলে ধরে হবে, প্রয়াত এ.কে.এম বজলুর রহমান সহ এলাকার গুনীজনরা মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও উন্নয়নের জন্য যে অবদান রেখেছিল তাদেরকে সম্মানিত করে প্রকৃত সম্মান দিয়ে তাদেরকে সব সময় স্বরনীয় করে রাখতে হবে। তারা আরো বলেন, তৎকালিন বৃহত্তম নারায়নগঞ্জ মহাকুমা রায়পুরা থানার আলীনগর গ্রামে সাহেব বাড়ীতে ১৯৩৩ সালে মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মৌলভী আহমেদ ও মাতা মরহুমা খাদেজা বেগম।
তিনি রায়পুরায় জন্মগ্রহণ করলেও রাজনৈতিক জীবন শুরু ও শেষ করেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। তিনি ১৯৪৮ সালে মেট্রিক ১৯৪৯ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আই এ, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে ছাত্র অবস্থায় পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রণের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যোগদান করেন। ঐ সময় সিলেট গণ ভোটার কার্যের জন্য তিনি সিলেটে যান। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নির্বাচন হয়ে ছিলেন। ১৯৫০ সালে শ্রমিক আন্দোলনে জড়িত হয়ে সূতাকল,পাটকল ও জাহাজী শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি বহুবার বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধত্ব করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন ও কেন্দ্রীয় সংগ্রাম কমিটির নেতা হিসেবে দায়িত্ব করেন।
তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কার্য পরিচালনা করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা আওমী লীগে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ দায়িত্ব পালন কালে ১৯৫৬ সালে ৯২’র ক ধারায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করে, পরে ১৯৫৮ সালে মার্শাল ‘ল’ জারী হলে পুনরায় গ্রেফতার হয়ে ক্যান্টেনমেন্টে কিছুদিন আটক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে আওমীলীগ পুনজীবিত হলে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর ও মহকুমার আহবায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা জেলা আওমী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে কর্মসূচি বাস্তবায়নকালে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দেড় বৎসর কারাভোগ করেন । ১৯৬৬ সালে গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কার্য পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যোদ্ধে সংগঠক হিসেবে অংশগ্রহন করেন মুজিব নগরে জয় বাংলা অফিস প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে চলাকালীন ১৭ টি যুব ক্যাম্প পরিচালনা ও গেরিলা যোদ্ধের তদারকি কাজে বিশেষ ভাবে সহায়তা করেন । স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের সাত সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে পূর্ব জার্মানী সফর করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কর্মীদের মাঝে একজন নিঃস্বার্থ ত্যাগী নেতা সুবক্তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ছিলেন। তার সহধর্মিনী সাহানারা বেগম এর আট পুত্র সন্তান রয়েছে। স্বামীর রাজনীতির কারনে ছোট ছোট সন্তান নিয়ে দু:খ কষ্টে জীবনের অনেক সময় পাড় করতে হয়েছিল। তাঁর ছেলেরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত। তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র হাসান জামিল বাদল আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে র্দীঘদিন যাবৎ জড়িত রয়েছে। অধ্যাপক সামসুজ্জামান, এডভোকেট মনিরুজ্জামান ও সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে কর্মরত আছে মো: মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৮৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী তার নারায়ণগঞ্জ বাসভবনে দীর্ঘদিন রোগক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতি বছর তার জন্ম ও শাহাদত বার্ষিকী পালন করা হয়ে থাকে।
আলোচনা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন আলীনগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা সিরাজুল ইসলাম তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার, জাতীয় ৪ নেতা, প্রয়াত এ.কে.এম বজলুর রহমান সহ মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত বীর সন্তানদের রোহের আত্নার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং এস এস এফ এর প্রধান মেজর জেনারেল মো: মুজিবুর রহমান এর সুস্বাস্থ্য র্দীঘায়ু কামনা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাজী হাসান জামিল বাদল, শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা হাজী শাহ আলম,বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন দুদু,বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মোগল হোসেন মাষ্টার, একে এম বজলুর রহমান বাজার কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন, পাড়াতলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ইলিয়াছ মিয়া, পাড়াতলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মন্নাফ মেম্বার, পাড়াতলী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ডা: শফিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইকরাম হোসেন সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দরা।