শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
কাঁচা টক আমের আচারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সাতক্ষীরার বাজারে আমের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন জেলার বাজারে শতশত মণ আম বেচাকেনা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁচা আম কেনা-বেচা শুরু হয়েছে।
প্রতি মণ আম দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় আম ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম বেশ সুস্বাদু হওয়ায় দিন দিন এ জেলার আমের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে , গড়ে উঠছে নতুন নতুন আম বাগান।
কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সুস্বাদু জাতের আগাম আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সারা দেশের ভেতর শীর্ষে রয়েছে সাতক্ষীরা।
আমের রাজধানী হিসেবে বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে সাতক্ষীরা। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খরার কারণে আ¤্রপালি, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আমের গুটি ঝরে যাওয়ায় আমের আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন চাষী ও বাগান মালিকরা।
বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকসহ ওষুধ প্রয়োগ করেও এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় গাছে আমের পরিমাণ কম। কালবৈশাখী ঝড় বৃষ্টির কথা চিন্তা করে আগাম আম ভাঙতে শুরু করেছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এতে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছে জেলার কয়েক হাজার আম চাষী।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৫২৯৯টি বাগান ও ১৩ হাজার আম চাষী রয়েছে। আম ব্যাবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, এ বছর আমের ফলন কম। তাতে আবার বৃষ্টি না হওয়ায় গুটি ঝরে যাচ্ছে। যে টাকা দিয়ে বাগান কিনেছিলাম বিক্রি করে আসলে টাকা উঠবে কি বলতে পারছিনা! এখন ১মাস সময় লাগবে পরিপক্ক আম বাজারে উঠতে।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের হানিফ গাজী বলেন, আমরা বর্তমানে যে আমগুলো ভেঙে বাজারে বিক্রয় করছি সেগুলো আটির চারা গাছের আম এই আম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানি এই আম গুলো আমাদের থেকে সংগ্রহ করে।
দেবহাটা থেকে আসা বাগান মালিক জহুরুল বলেন, এ বছর আমার বাগানে ভালো মুকুল এসেছিলো কিন্তু আমের গুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে ঝরে যাছে। বর্তমানে বাগানে যে পরিমান আম রয়েছে যদি ঝড়বৃষ্টিতে না পড়ে তাহলে জমির হারিসহ খরচের টাকাটা উঠবে হয়তো।
আগড়দাঁড়ি এলাকার জলিল বলেন, এখন বাজারে কাঁচা আমের দাম ভালো এবং ঝড় বৃষ্টিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে আগেই আম ভেঙে বিক্রয় করছি। এ বছর আমের ফলন খুবই কম।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের কাঁচা পাকা ফল ব্যবসায়ী মো. রজব আলী বলেন, বর্তমানে বাজারে যে আম উঠছে আচারের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করছে। বর্তমানে বাজারে আমের দাম ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা চলছে।
সাতক্ষীরা শহর কাঁচা ও পাকা বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, আঁটির চারাগাছের আম পাকলেও টক কাঁচা অবস্থায় ও টক। কাঁচা অবস্থায় বাজারে চাহিদা থাকায় ও ভালো দাম পাওয়ায় চাষীরা আম ভেঙে বাজারে বিক্রয় করছেন।
অন্য বছরের তুলনার এ বছর, বাজারে কাঁচা আম বেশি উঠছে এগুলো দিয়ে মূলত আচার, চাটনি, জেলি, কাচা আমের জুসসহ বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রয় করছে ।অনেক কোম্পানিও এই আম সংগ্রহ করছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় আগাম বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে ফলন গেছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার কিছু কিছু স্থানে বাজারে কাঁচা আম বিক্রি শুরু হয়েছে। এই আম মূলত আচার, জেলি, চাটনী ও জুস তৈরি করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করে থাকে। সঠিকভাবে পরিচর্যা না করতে পারা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত বাতাস প্রবাহের কারণে আমের গুটি ঝড়ে যাচ্ছে। ঝড়ের শঙ্কায় ও কাঁচা আমের চাহিদা থাকায় চাষীরা আম ভেঙে বিক্রয় করছে। এখনও পরিপক্ক আম বাজারে উঠতে ২ সপ্তাহের বেশি সময় লগবে। তবে অপরিপক্ক আম পাকানোর উদ্দেশ্যে যদি কেউ ‘ক্যামিক্যাল স্প্রে’ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাষীদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।