সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজার (জেলা) প্রতিনিধি:
গ্রীষ্মের দাবদাহ যখন প্রকৃতিকে রুক্ষ ও বিবর্ণ করে তুলতে চায়, তখনই প্রকৃতি নিজেই যেন এক নিপুণ শিল্পীর মতো তুলে ধরে তার রঙিন তুলি। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কের দু’পাশ জুড়ে এখন চোখে পড়ে হলুদ ঝর্নাধারার মতো ঝুলে থাকা অসাধারণ এক ফুল সোনালু। বাঁদর লাঠি নামেও পরিচিত এই ফুলটির ইংরেজি নাম ‘Golden Shower Tree’। বৈজ্ঞানিক নাম Cassia fistula।
বিশেষ করে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, শমশেরনগর, পতনউষার, আলীনগর, মাধবপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার গ্রামাঞ্চলের পথের ধারে ধারে ফুটে উঠেছে সোনালুর অপরূপ সৌন্দর্য। বাতাসে দুলতে থাকা এই ফুলের থোকাগুলো যেন প্রকৃতির পেইন্টব্রাশ দিয়ে আঁকা রঙিন দৃশ্যপট। পর্যটক, পথচারী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে তৈরি করছে প্রশান্তি ও আনন্দ।
সোনালু ফুল সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে ফুটে থাকে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এটি বেশি দেখা যায়। ছোট-বড় অনেক গাছেই দেখা যায় এই ফুলের বাহার। ডাল থেকে ঝুলে পড়া থোকা থোকা ফুলের মাঝে থাকে গাঢ় হলুদ রঙের মাধুর্য। সূর্যের আলোতে ঝকমক করে এই ফুল, যা দূর থেকে দেখলে ঝুলন্ত সোনার মালার মতো মনে হয়।
জানাযায় বন বিভাগের উদ্যোগে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সোনালু গাছ রোপণ করা হয়েছে সড়ক ও মহাসড়কের পাশে। এটি শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না, পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। এর পাতা ও ডাল থেকে ছায়া পাওয়া যায়, যা গ্রীষ্মের খরতাপে এক প্রশান্তির আবেশ এনে দেয়।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আব্দুল কাদির বলেন” শুধু রূপেই নয়, গুণেও অনন্য সোনালু গাছ। এর বাকল, পাতাসহ বিভিন্ন অংশ আয়ুর্বেদিক ও হেকিমি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ মতে, সোনালুর ফল পেট পরিষ্কার করতে সহায়ক। এছাড়া চর্মরোগ ও বিভিন্ন অন্ত্রের রোগ নিরাময়ে এই গাছের নির্যাস ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা লেখক ও গবেষক আহমেদ সিরাজ বলেন, “প্রতিবছর যখন সোনালু ফুটে, তখন মনে হয় প্রকৃতি নিজেই যেন একটি উৎসব আয়োজন করে। গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এই হলুদ ফুলের স্নিগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায়। আমরা চাই, এই ফুলকে ঘিরে আরও সচেতনতা তৈরি হোক এবং মৌলভীবাজার পর্যটনের নতুন উপকরণ হোক এই সোনালু।”
প্রসঙ্গত: সোনালু শুধু একটি ফুল নয়, এটি প্রকৃতির এক আশীর্বাদ। মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করে চলেছে এই ফুল। এমন ফুলের সংরক্ষণ ও প্রসারে প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য যেন আগামী প্রজন্মও উপভোগ করতে পারে, সেটিই হোক আমাদের কামনা।