শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি:
চেয়ারম্যান: মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ আসিফ খোন্দকার, আইনবিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট ইলিয়াস , যোগাযোগ : ০১৬১৬৫৮৮০৮০,০১৮১১৫৮৮০৮০, ঢাকা অফিস: ৪৩, শহীদ নজরুল ইসলাম রোড, চৌধুরী মল (৫ম তলা), টিকাটুলি ১২০৩ ঢাকা, ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশ মেইল: bdprotidinkhabor@gmail.com চট্টগ্রাম অফিস: পিআইবি৭১ টাওয়ার , বড়পুল , চট্টগ্রাম।
সংবাদ শিরোনাম:
চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ৬ বছরের কণ্যা শিশু ধর্ষণ পুলিশের অভিযানে গাজীপুর থেকে চুরি হওয়া ১০,০৯০ পিস টি-শার্ট চট্টগ্রামে উদ্ধার কম্বাইন্ড হিউম্যান রাইটস ওয়ার্ল্ড এর উদ্যোগে পাঞ ঞা জ্যোতি ভিক্ষু সংবর্ধিত  সিএমপি কমিশনারের প্রথম ‘ওপেন হাউজ ডে’-তে সেবা নিলেন ৮৪ জন সেবাপ্রত্যাশী আজ দেশে ফিরছেন লিবিয়ায় ‘বিপদগ্রস্ত’ ১৫৪ জন অভিবাসী পানছড়ির দূর্গম কচুছড়িতে ৩ বিজিবি’র বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নওগাঁর মান্দায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানার হত্যা মামলার দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আলাউদ্দিন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম মেধাবীদের হাতে থাকলে দেশ পথ হারাবে না আগামীর বাংলাদেশ রাজশাহীতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি

এসপিএম প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে যাচ্ছে বিপিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বহুল প্রত্যাশিত এসপিএম (ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন) প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আগামী রোববার (২৫ জুন) সরাসরি জাহাজ থেকে ক্রুড অয়েল এসপিএমের সাহায্যে সমুদ্রের তলদেশের পাইপলাইনের মাধ্যমে শোর ট্যাংকে নেওয়া হবে। এজন্য ৮১ হাজার ৭৩৫ টন এরাবিয়ান ক্রুড অয়েল নিয়ে শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে মাদার ভ্যাসেল ‘এমডি হোরে’। পরদিন ২৫ জুন এসপিএমে প্রথম ফিলিং করার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। তিন দিনেই জাহাজটির ক্রুড অয়েল খালাস নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। মূলত আমদানি করা জ্বালানি তেল জাহাজ থেকে দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে খালাস করতেই এ প্রকল্প নেয় বিপিসি।

তবে প্রাথমিক অপারেশনাল কার্যক্রম হিসেবে ফার্স্ট ফিলিং শুরু হলেও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। বর্তমান অবস্থায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩০ জুন। তবে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় নতুন করে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সময়ের পাশাপাশি বাড়ছে ব্যয়ও। ৪র্থ দফার এ সংশোধনীতে প্রায় এক হাজার ২১৭ কোটি টাকার ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। এর আগে তৃতীয় দফায় সংশোধিত হয়ে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয় দাঁড়িয়েছিল প্রকল্পটির। যদিও কাজের শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রায় দুই বছর প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা ছিল। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ে প্রভাব পড়েছে। যে কারণে চতুর্থ দফায় বাড়ছে ব্যয়।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক এবং এসপিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত জাগো নিউজকে বলেন, এসপিএম প্রকল্পে ক্রুড অয়েলের প্রথম ফিলিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এতে কিছু ব্যয়ও বাড়ছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসপিএম প্রকল্পের ব্যয়ে প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, নতুন প্রস্তাবিত সময় অনুসারে ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) এখন ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) পরিশোধন ক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে নির্মাণাধীন ইউনিট-টু প্রকল্প চালু হলে ইআরএলের ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা বছরে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। অন্যদিকে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বছরে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করতে হয়। বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলী চ্যানেলের নাব্য ৮ মিটার থেকে ১৪ মিটারের নিচে হওয়ায় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে ক্রুড অয়েলবাহী বড় ভ্যাসেল হ্যান্ডেল করতে পারে না চট্টগ্রাম বন্দর। যে কারণে ক্রুড অয়েলবাহী মাদার (বড়) ভ্যাসেলগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করা হয়। মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ করে ক্রুড আনলোড করা হয়। লাইটারেজ ব্যবহার করে ক্রুড অয়েল আনলোড করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় আমদানি করা জ্বালানি খালাসে ব্যয় ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়াতে উদ্যোগ নেয় সরকার। তারই ফলস্বরূপ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) সহ পাইপলাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় বিপিসি। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে সময়ক্ষেপণে প্রকল্পটির ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কয়েকবার সংশোধিত হয়ে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। প্রশাসনিক অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের (সিপিপিইসিএল) সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। প্রায় দেড় বছর পর ২০১৮ সালের ১৪ মে থেকে কাজ শুরু করে ইপিসি ঠিকাদার।

প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ৬ জুলাই প্রথম দফায় সংশোধিত হয়ে ব্যয় বাড়ে এক হাজার ১৪২ কোটি টাকা। পরে মাতারবাড়ী চ্যানেল ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রায় দেড় কিলোমিটার পাইপলাইন সমুদ্রতটের ৩০ ফুট গভীরে বসানো হয়। এর ফলে দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। সবশেষ ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে তৃতীয় দফায় ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের প্রভাব পড়ে এসপিএম প্রকল্পে। এ অবস্থায় চতুর্থ দফায় প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রকল্পটি। এতে বৈদেশিক সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এসপিএম প্রকল্পে নতুন করে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে প্রায় এক হাজার ২১৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ইপিসি এবং পিএমপি ঠিকাদারের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা। এছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্ধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৭ কোটি টাকা। বাকি ৫৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে ভ্যাট খাতে। এর ফলে প্রকল্পে সবমিলিয়ে ব্যয় দাঁড়াবে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে এসপিএম নির্মাণের পাশাপাশি মহেশখালীর মাতারবাড়ী উপকূলে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার তিনটি ক্রুড অয়েল স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে রয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার তিনটি ডিজেল স্টোরেজ ট্যাংক। পাশাপাশি মহেশখালীতে পাম্প স্টেশন স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম স্থাপন এবং ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল কাজের অংশ হিসেবে অফশোরে ১৪৬ কিলোমিটার ও অনশোরে ৭৪ কিলোমিটারসহ মোট ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শেষ।

এদিকে, কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং মাতারবাড়ী অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশে ডিপ পোস্ট ট্রেন্সিং পদ্ধতিতে চারটি পাইপলাইন সমুদ্রতটের ৩০ ফুট গভীরে স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া মহেশখালীর ধলঘাটায় একটি, চট্টগ্রামের গহিরায় একটি, ডাঙ্গারচরে একটি ব্লক বাল্ব স্টেশন এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাইক্রোওয়েভ রিলে টাওয়ারের কাজও শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২৫ জুন প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার কমিশনিং ও টেস্টিংয়ের জন্য ক্রুড অয়েল ফার্স্ট ফিলিংয়ের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার ৮১ হাজার ৭৩৫ টন এরাবিয়ান ক্রুড অয়েল নিয়ে প্রথম জাহাজ মহেশখালীর এসপিএম ডিসচার্জ পয়েন্টে আসবে। পরদিন রোববার ওই জাহাজ থেকে এসপিএমে প্রথম ফিলিং শুরু হবে। তিনদিনের মধ্যেই জাহাজে থাকা ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ইআরএল-২ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইআরএল-২ হলে আমাদের ক্রুড পরিশোধন ক্ষমতা ৩০ লাখ মেট্রিক টন বেড়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। এতে এসপিএম প্রকল্পের ভালো সুফল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে এক লাখ টনের ক্রুড অয়েলবাহী একটি মাদার ভ্যাসেল খালাস নিতে কমপক্ষে ১১ দিন সময় লাগে। এসপিএম পুরোদমে চালু হলে ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিজেল ও ক্রুড অয়েলবাহী জাহাজ খালাস করা সম্ভব হবে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Design & Development BY ThemeNeed.Com