বাংলাদেশ প্রতিদিন খবর
- শনিবার ৪ জুন, ২০২২ / ১০১ জন দেখেছে
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে ৪ জুন প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে চা বোর্ডে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চা–শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ৪ জুন চা দিবস পালনের গত বছর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার।
উল্লেখ্য, ১৮৪০ সালে দেশে এক ব্যক্তির উদ্যোগে চা উৎপাদন শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে। চা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম বাঙালি হিসেবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সে কারণেই ৪ জুন জাতীয় চা দিবস পালন করা হয়। দ্বায়িত্বে থাকা কালে বঙ্গবন্ধু আইন সংশোধন করে চা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করেন। পরে চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেন। চা উৎপাদনকারীদের নগদ সহায়তার পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহ করেন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধু চা–শিল্পে অনেক অবদান রেখেছেন। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের পর চা–বাগান পুনর্বাসনে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের নির্দেশনা, চা–শিল্প ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মালিকানাবিহীন ও পরিত্যক্ত চা–বাগান পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেন। চা গবেষণা স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। শ্রমিকদের বিনা মূল্যে বাসস্থান, শিক্ষা, রেশন পাওয়াও নিশ্চিত করেন। জাতীয় চা দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশের চা উৎপাদনকারী অঞ্চল চট্টগ্রাম, সিলেট, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণে আরও একটি চা মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের ১৬৭টি বাগানের ৬১ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমিতে চা চাষ বাড়ছে, যেখানে কৃষকেরাই জমির মালিক। গেল বছর ১ কোটি ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে সেখানে। কর্মসংস্থান হয়েছে ২৫ হাজার নারী–পুরুষের। আগামী ২০২৫ সালে সাড়ে ১২ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা করেন তিনি। দেশের চা বাগানগুলোয় ২০২১ সালে নয় কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে বলে টিপু মুনশি আরও বলেন, চায়ের নতুন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের চা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতদিন শুধু দেশের পাহাড়ি অঞ্চল অর্থাৎ চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সিলেটে চা উৎপাদিত হতো, এখন দেশের উত্তরাঞ্চল পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের সমতল ভূমিতেও চা উৎপাদিত হচ্ছে। এতে অন্য ফসল চাষে অনুপযোগী জমিগুলোতে চা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ও দেশে চা শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে বিপুল পরিমাণ চা রফতানি করতে পারবো। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে চা–শিল্প অনেক এগিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ২১টি উচ্চফলনশীল জাতের ক্লোন অবমুক্ত করা হয়েছে। চা দিবসে শুক্রবার খরাসহিষ্ণু ও উন্নত ফলনের আরও দুটি ক্লোন অবমুক্ত করা হবে।