মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
ইবাদত ও বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং তাঁর দরবারে কান্নাকাটির মাধ্যমে পাপ মোচনের মাস পবিত্র রমজান। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি হলো যে ব্যক্তি রমজান পেল; কিন্তু পাপ মোচন করতে পারল না, তাঁর ধ্বংস অনিবার্য। তাই পূর্ববর্তী আলেম ও আল্লাহপ্রেমী বান্দারা রমজানের আগ থেকেই মহিমান্বিত এই মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রমজানের প্রস্তুতি : মহানবী (সা.) প্রধানত তিনটি কাজের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
১. দোয়া করা : রমজানের দুই মাস আগ থেকে রমজান লাভের দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। ’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৩৬৯)
২. রোজা রাখা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)
৩. চাঁদের হিসাব রাখা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন। ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)
সাহাবিদের প্রস্তুতি : রমজানের সময় নিকটবর্তী হলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ইবাদত-বন্দেগি বৃদ্ধির মাধ্যমে পবিত্র এই মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। আনাস (রা.) বলেন, যখন শাবান মাস প্রবেশ করত লোকেরা (সাহাবিরা) কোরআনের প্রতি ঝুঁকে পড়তেন এবং তা তিলাওয়াত করতেন, তারা সম্পদের জাকাত আদায় করতেন, অসহায় ও দুর্বল লোকদের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে কাজ করতেন যেন তারা রোজা রাখতে পারে। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৩৫)
রমজান নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত দোয়াটি ওমর (রা.) বেশি বেশি করতেন। দোয়াটি হলো—‘হে আল্লাহ, আমাদের বেশি দান করুন, আমাদের কম দেবেন না, আমাদের সম্মান ও মর্যাদা দিন, আমাদের লাঞ্ছিত করবেন না, আমাদের দান করুন, বঞ্চিত করবেন না, আমাদের অগ্রগামী করুন, আমাদের ওপর অন্য কাউকে অগ্রগামী করবেন না, আমাদের সুপ্রসন্ন করুন এবং আমাদের ওপর সুপ্রসন্ন থাকুন। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭১৭৩; মুসনাদে আহমদ : ১/১২৭)
পরবর্তীদের রমজানের প্রস্তুতি : সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর পরবর্তী যুগের পুণ্যাত্মা ব্যক্তিরাও কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, তাহাজ্জুদ ও তাওবার মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারি সাকতি (রহ.) বলেন, ‘বছর হলো গাছ, মাস হলো তার কাণ্ড, দিনগুলো তার শাখা-প্রশাখা, সময়গুলো হলো পাতা। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস হলো তার ফল। রজব মাসে তা পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়, শাবানে তার শাখা-প্রশাখা বের হয় এবং রমজানে তাতে ফল আসে। মুমিন হলো সেই ফল সংগ্রহকারী। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২৩৪)
বছরজুড়ে রমজানের ভাবনা : প্রকৃতপক্ষে পূর্বসূরিরা সারা বছরই রমজানের জন্য প্রস্তুত থাকতেন। ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘পূর্বসূরিদের কাছ থেকে একদল মানুষ একটি দাসী কিনল। রমজানের সময় নিকটবর্তী হলে দাসী তাদের রমজানের প্রস্তুতি নিতে দেখল। তারা খাদ্য ইত্যাদি প্রস্তুত করছিল। দাসী তাদের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলল, আমরা রমজানের রোজার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সে বলল, তোমরা রমজান ছাড়া রোজা রাখো না। আমি এমন একদল মানুষের কাছে ছিলাম যাদের কাছে পুরো বছরই রমজানতুল্য ছিল। সুতরাং আমাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৪৭)
আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দিন। আমিন