বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
পরীক্ষামূলকভাবে চাষের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ফুটেছে এ ফুল। এর ফলে ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ইউরোপের রাজসিক ফুল টিউলিপ দেখতে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ফুলচাষিদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বীজ (কন্দ) সংগ্রহের মাধ্যমে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
বরাবরই নতুন জাতের ফুল উৎপাদনে উৎসাহী যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন। গোলাপ ও রজনীগন্ধার পাট চুকিয়ে তিনি উৎপাদন করেছেন লংস্টিক, লিলিয়াম ও জারবেরা। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি কৃষি বিভাগের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র পাঁচ শতক জমিতে রোপণ করেছেন নেদারল্যান্ডসের ফুল টিউলিপ। বর্তমানে ইসমাইলের পলিথিনের শেডের নিচে ঝলমল করছে সবুজ কা- ও পাতার ওপরে লাল, সাদা, হলুদ, জাম, লাল-হলুদ, সাদা-হলুদ, গোলাপি রঙের চোখ ধাঁধানো এ সময়ের সবচেয়ে দামি ফুল টিউলিপগুলো।
এ প্রসঙ্গে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মূলত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন টিউলিপ চাষের ব্যাপারে আমাকে আগ্রহী করেন এবং সরকারি খরচে কৃষি বিভাগ থেকে তিনি ৫ হাজার টিউলিপ ফুলের বীজের ব্যবস্থা করে দেন। নেদারল্যান্ডস থেকে আসা কন্দগুলো ২ জানুয়ারি পাওয়ার পর ৬ জানুয়ারি তা রোপণ করি। মাত্র ১৮ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ২৬ দিনের মাথায় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গাছগুলো। টিউলিপের সৌন্দর্যে আমি নিজেই মুগ্ধ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় ফুলচাষিসহ এখানে ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীরাও ভিড় করছেন আমার ক্ষেতে। ইচ্ছা না থাকলেও প্রতি পিস ১২০ টাকা করে ১২টি ফুল বিক্রি করেছি। ভালোবাসা দিবস পর্যন্ত ফুলগুলো রেখে দিতে চাই। যাতে ফুলপ্রেমীরা এটা দেখতে পান।’
তিনি বলেন, ‘গদখালীতে আমিই প্রথম এই ফুলের চাষ করেছি। আসলে এর সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ হয়েছি, বিক্রির চিন্তা করছি না। দেখেই মন ভরে যাচ্ছে।’
শীতপ্রধান দেশের ফুল উল্লেখ করে ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের এখানেও শীতের মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে এটা রোপণ করে ফুল পাওয়া সম্ভব। আমি ২৪০ (৩৬ ইঞ্চি মাপের বেডে) ৬ ইঞ্চির বেশি দূরত্বে বীজ বপন করেছি। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনও করেছি। মাত্র দুইবার সেচ ও জৈব সার ব্যবহার করে এক মাসের মধ্যেই ফুল পেয়েছি। প্রথম দফায় কিছুটা ভুলের কারণে কিছু গাছ একটু দেরিতে হয়েছে।’
টিউলিপ ফুলের বাগান দেখতে আসা সাদিয়া ইয়াসমিন মুন বলেন, ‘গদখালিতে আসার অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে তার। চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে তিনি বলেন, টেলিভিশন, ইউটিউব আর পত্রিকার পাতায় কেবল টিউলিপ ফুলের গল্প শুনেছি। আজ (১১ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার নিজ চোখে দেখলাম টিউলিপ ফুল। সামনাসামনি দেখে এত ভালো লাগছে কথায় বোঝানো যাবে না।’
স্থানীয় ফুলচাষি ইমামুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে যে ফুল চাষ হয়, তা একে অপরকে দেখে শেখা। ইসমাইল এর আগেও নতুন নতুন ফুল চাষ করেছে। এবার সে টিউলিপ ফুটিয়েছে। কয়েকদিন ধরে খবরটা শুনে আজ (১১ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার দেখতে এলাম। ফুলগুলো মন কেড়ে নিয়েছে। ফুলের আকার দেখে মনে হচ্ছে চাষ করলে ভালো ফলন হবে। এজন্য ইসমাইলের কাছ থেকে টিউলিপের চাষ পদ্ধতি জেনে নিয়েছি। সামনের বছর তার কাছ থেকে বীজ নেওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, পারস্যে লাল টিউলিপকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করা হয়। পামির মালভূমি ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে উদ্ভূত হয়ে টিউলিপ কাজাখস্তানে স্থানান্তরিত হয়। যা পরবর্তীতে ইউরোপের দক্ষিণাংশ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়ার আনাতোলিয়া থেকে ইরানের পূর্বাংশ, চীনের উত্তর-পূর্বাংশ, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের’ মাধ্যমে ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারায় টিউলিপ ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের মোট আট প্রজাতির বীজ আনা হয়েছে। ৫ হাজার টিউলিপ ফুলের বীজ ঝিকরগাছায় লাগানো হয়েছে। লাগানোর এক মাসের মধ্যে ফুল ফুটেছে। ইসমাইল হোসেনের ক্ষেতে যে ফুল এসেছে তার আকার ও রঙ ভালো। আমাদের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারাতে একটি কোল্ড স্টোরেজ করা হয়েছে। আশা করছি, কন্দ থেকে নতুন বীজ তৈরি করে সেখানে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এটা করতে পারলে আগামী বছর থেকে পুরো গদখালীতে হেক্টর হেক্টর জমিতে এ ফুলের আবাদ হবে