শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, শত্রু শুধু বাইরে নয়, শত্রু ঘরের ভেতরেও। বাইরের শত্রুদের চেনা যায়, ঘরের শত্রু চেনা বড় কষ্টের।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে আমরা খন্দকার মোশতাককে চিনতে পারিনি, মেজর ডালিমকে চিনতে পারিনি, কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদকে চিনতে পারিনি। আজকে আমাদের সবাইকে সচেতন ও সতর্কভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে তিনি এ কথা বলেন। মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও জমি দখলের বিষয় উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে একজন ট্যাক্সিচালককে জবাই করা হয়েছে।
আমাদের কাছে খবর আছে, বরিশালের এক এমপি সংখ্যালঘুদের জমি জবরদখল করে তাদের উচ্ছেদের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়া শখের বাগানবাড়ি তৈরি করার জন্য বর্তমান সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এক এমপির পরিবার প্রতিবেশী অসহায় পরিবারকে জায়গা জমি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।
শুধু তাই নয়, আমরা যখন গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের ঘটনাটা দেখি, আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পার্বত্য শান্তিচুক্তির আগের পরিস্থিতি ফিরে আসছে কি না! অথচ এই পরিস্থিতির জন্য পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়নি।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের ঘোষণাকে ইতোমধ্যেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। আগামী দুই বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং নির্বাচন পরবর্তীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির নীলনকশা অনুযায়ী এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে বলেই আমরা মনে করি।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আপনার দল অঙ্গীকার করেছিল সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্যবিলুপ্ত আইন প্রণয়ন, শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে। নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি, আমরা চাই, যে অঙ্গীকার আপনি করেছেন এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করবেন।
সংসদে অথবা সরকারি দলের অভ্যন্তরে থেকে যারা প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের দৃশ্যমান ভূমিকা দেখতে চাই।
মানববন্ধনে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর মন্ডল বলেন, মুসলমান ভাইয়ের যেমন কবরের প্রয়োজন, তেমনি একজন হিন্দুর প্রয়োজন শ্মশান। একজন এমপির কাজ জায়গা দখল নয়। বরিশাল বা দেশে যেসব ঘটনা ঘটছে তা অন্যায়। আমরা শান্তি চাই। যারা ভূমি দখলকারী-অন্যায়কারী, তাদের কোনো দল নেই, তাদের কোনো জায়গা নেই। তারা অন্যায়কারী।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি মিলন দত্ত বলেন, যারা সংসদ সদস্য তাদের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। শপথ নিয়ে যারা সংসদে আসেন, তারা সাম্প্রদায়িক হবেন, তা কাম্য নয়। আমরা যা শুনেছি তার নিন্দা জানাই।
বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি পংকজ সাহা বলেন, শুধু গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়। সরকারের কিছু মন্ত্রী-এমপি এবং আমলা এই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেন। এদের যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস বল প্রমুখ।