বাংলাদেশ প্রতিদিন খবর
- বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই, ২০২২ / ১৯৭ জন দেখেছে
পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রওশন আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, অনাচার, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হাটখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতারণার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার ৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান।
বুধবার (২০ জুলাই) রাতে দুলাই মডেল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান ও তাঁতিবন্দের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মৃধা।
তারা বলেন, ‘গত ১৭ জুলাই আমরা ৯ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান একযোগে পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরে এটি নিয়ে গণামধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিভিন্ন মহলের চাপে এবং অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেছেন হাটখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান।’
তাদের দাবি- ‘ফিরোজ আহমেদ খান ডিসি অফিসে সই-স্বাক্ষর অস্বীকার করে যে অভিযোগ দিয়েছেন তা সম্পুর্ণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) যোগসাজসে করেছেন। ফিরোজ আহমেদ খান যে সই-স্বাক্ষর অস্বীকার করেছেন সেই সই-স্বাক্ষরের সঙ্গে তার বিভিন্ন মিটিংয়ের স্বাক্ষর, রেজলেশন বই ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টস, পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ তার বিভিন্ন কাগজপত্রের সই-স্বাক্ষর যাছাই-বাছাই করলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তারা বলেন, ‘যদি এইসব যাছাই-বাছাই করে আমরা দোষী হই, তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর যদি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খানের প্রতারণা ধরা পড়ে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
তারা আরও অভিযোগ করেন, ‘গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মিলে সুজানগরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। নৌকার প্রার্থীদের হারাতে তারা এমন কাজ নেই যা তারা করেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটপ্রার্থনা করেছেন। তারপরও তারা নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারেননি। এখন তারা আমাদের পরিষদকে অকার্যকর এবং আমাদেরকে বাদ দিয়ে উপজেলার নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার উপ-পরিচালক মহাদয় যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহণ করেন তাহলে বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একযোগে অনাস্থা প্রস্তাব করবো। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজানগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান কল্লোল, সাগরকান্দির চেয়ারম্যান শাহীন চৌধরী, রানীনগরের চেয়ারম্যান জি, এম, তৌফিক আলম পীযুষ, মানিকহাটের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম, ভায়নার চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন, আহম্মদপুরের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও সাতবাড়ীয়ার চেয়ারম্যান আবুল হোসেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই ৯ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন আলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিনের যোগসাজসে উপজেলা পরিষদের কার্যকরী সদস্যদের অগোচরে দূরভিসন্ধিমূলক ভাবে উপজেলা পরিষদের কোনও নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে এক তরফাভাবে সমস্ত কার্যপরিচালনার অভিযোগ আনা হয়।
সেই অভিযোগে তারা বলেন, কখন কি পরিমাণ বরাদ্দ আসে তা সদস্যদের জানানো হয় না। সদস্যরা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরোধিতা করলে তাদের প্রকল্প বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়। তাছাড়া জন্মনিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাধারণ মানুষকে চরমভাবে হয়রানি করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা (চেয়ারম্যান) উপজেলা পরিষদের সদস্য হওয়া সত্বেও উপজেলা পরিষদের কার্য বিবরণী সম্পর্কে কিছু জানতে পারে না। কৃষি পূনর্বাসন কৃষকের মাঝে সার-বীজ, দুস্থদের মাঝে ঢেউটিন, গ্রাম পুলিশের বাইসাইকেল বিতরণ, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর বরাদ্দ বিতরণ করার সময় তাদের বলা হয় নাই।
অভিযোগে তারা আরও দাবি করেন, তাছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদের নিবাচিত সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে তাদের অবহিত করা হয় নাই। জাতীয় দিবসের কোনও অনুষ্ঠানে তাদের ডাকা হয় নাই। সকল মিটিং করা হয় তাহার কার্যবিবরণী দেওয়া হয় না। উপজেলা রাজস্ব খাতে টাকা এবং জমি হস্তান্তর কর ২% এর টাকা কিভাবে কোথায় কাজ করে সে বিষয়ে সদশ্যদের জানানো হয় না।
ভুক্তভোগী চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের টাকা ১০% থেকে ১৫% টাকা স্ব-স্ব হার্টের কাজ করার কথা থাকলেও তা কোথাও করা হয় নাই। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের আওতায় ৯৯ লক্ষ ১৯ হাজার ৭০০ টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যা ছোট কাজগুলো টেন্ডার দিয়ে আর বড় বড় কাজগুলো পিআইসি ও কোটেশনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের যোগসাজসে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে দিয়ে টাকা আত্বসাৎ করছে।