রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন মৌলভীবাজার-৪ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রীমঙ্গলের গুহ রোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এডভোকেট আব্দুর রব বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ক্ষমতায় গেলে সকলকে নিয়ে ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্টা করা হবে ‘আমাদের রাজনীতির মূল কনসেপ্ট হচ্ছে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতি মানুষের কমিটম্যান্ট এবং আস্থা, এটা আমাদেরকে উদ্বেলিত করে, আশান্বিত করে। আমাদের চাওয়া একটা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ। আমরা আমাদের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কর্মসূচী নিয়ে যাব। মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করব। যাকেই জনগন প্রতিনিধি নির্বচিত করবে আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ বিনির্মানের জন্য কাজ করব। এখানে আমাদের দলীয় ক্ষুদ্র কোন স্বার্থ নেই। আমাদের একটাই স্বার্থ আমরা আমাদের এলাকাকে উন্নত করব। এজন্য আমি অনুরুধ করব, যেন আমরা জুলাই বিপ্লবকে ধারন করে, আমাদের সকল শহীদদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করি। যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরন করেছেন তাদেরকে আমরা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাই।’
এসময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার আমির মাও. মো. ইসমাইল হোসেন, সেক্রেটারী মো. আশরাফুল ইসলাম কামরুল।
তিনি আরো বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আল্লাহ প্রদত্ত যে প্রকৃতি রয়েছে, এই সম্ভাবনাকে আমরা ৫৪ বছরে কাজে লাগাইতে পারিনি। আমাদের এলাকায় যেদিকে চোখ যায় দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি রয়েছে। এইসব প্রকৃতিকে কিভাবে ট্যুরিজমে কাজে লাগানো যায় সেদিকে আমার বিশেষ দৃষ্টিপাত করব। ব্যাপক ভিত্তি কর্মসূচী গ্রহন করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দৈন্যতা রয়েছে, আগে যারা দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তারা ঠিক মতো করেন নাই। এছাড়া দুই উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভায় যে ধরনের সম্ভাবনা এবং সুযোগ আমাদের রয়েছে, বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক যে বিশাল সম্ভাবনা এবং খাত রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগানো হয়নি। তাছাড়া প্রত্যান্ত এলাকার রাস্তাঘাটের যে বেহাল দশা, এসব রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেগুলোকে ভালো প্রজেক্টের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে একটা সুন্দর নৈসর্গিক এলাকা হিসেবে উন্নত করা সম্ভব।’
আব্দুর রব বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা দুর্নীতি করেছেন, স্বজনপ্রীতি করেছেন, যারা ক্রাইম করেছেন, এরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাস করা সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন। যারা সচিব হয়েছেন, সেখানে বসে দুর্নীতি করেছেন, আর বাংলাদেশকে বিভিন্ন দিকে ট্যাগে পরিনত করার চেষ্টা করেছেন। তারা যদি সৎ এবং যোগ্য না হন, তাহলে বাংলাদেশ সুন্দর হবে না। আমাদের এলাকায় ১০০ গজের মধ্যেই হিন্দু ভাইদের মন্ডপ রয়েছে। আমাদের যে কোন অনুষ্ঠান এবং পূজা-পার্বনে আমাদের যে সম্প্রীতি রয়েছে সেটা একদিনের না। আমরা এরকম একটা সম্প্রীতির বাংলাদেশে বসবাস করি। এরমধ্যেও অনেক মানুষের নেরেটিভ চেতনা আছে যে, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান অর্থ্যাৎ মাইনুরিটির কি হবে ? আমি চ্যালেঞ্জ করে বলি, এ বিষয়টা ধারন করি ব্যাপক ভাবে আমরা সকলে মিলেই বাংলাদেশ। আমাদের ঐক্যবদ্ধ একটা বাংলাদেশ। আমাদের কনসেপ্টটা হবে দুর্নীতির বিরোদ্ধে জিরো টলারেন্স। আর আমরা সুন্দর সম্মৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল গনতান্ত্রীক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত, তারা একটা দাবী পেশ করেছেন জুলাই বিপ্লবের আইনগত স্বীকৃতি, এই দাবীতে আমরা নিয়মিত কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছি। আমরা অবশ্যই জুলাই আন্দোলনের যে সমস্ত বিষয়গুলো জুলাই সনদে স্বীকৃতি পাবে সেগুলোর আইনগত ভিত্তির জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়ে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন যেন নির্ধারিত তারিখেই অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি, সংস্কার এবং নির্বাচনের আমাদের জোড়ালো দাবী রয়েছে এবং যারা গণহত্যা করেছেন, অবশ্যই তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবী জানাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ আর কোনো নেরেটিভ রাজনীতি পছন্দ করে না। আমি আপনাদেকে আশ্বস্থ করতে চাই, এদেশের সচেতন, জ্ঞানী-গুণী এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা আগামী দিনের নেতৃত্বে যারা আসবেন, তাদের একটা ম্যাসেজ ইতিমধ্যে দেশবাসী পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমারা যখন ছাত্র শিবির করি তখন আমাদের দায়িত্বশীলরা কানেকানে বলতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে আপনারা ওইদিকে যাইয়েন না। ছাত্রশিবির সন্ধেহে আপনি আহত হবেন, নিহত হবেন। এরকম একটা নেরেটিভ অবস্থার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরকে পিঠাইলে কোনো বিচার হতো না। পাখি হত্যা করলে ৫’শ থেকে এক হাজার টাকা জরিমানা হতো কিন্তু শিবিরকে মারপিঠ করলে বিচার হতো না। আজ সেসব প্রতিষ্ঠানে সাধারন ছাত্ররা ম্যান্ডেট দিয়েছে ইনসাপের পক্ষে ছাত্রশিবিরকে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজী সন্ত্রাস এবং ইনসাফের পক্ষে একটা বাংলাদেশ হবে। আর যদি এরকম একটা বাংলাদেশ হয়, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ৫বছরে বিশ্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পৌঁছবে। দুর্নীতি বন্ধ হলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মান হবে। আমরা সকলকে নিয়েই কাজ করতে চাই, সকলের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহনের ভিত্তিতে। আমি আশা করি আগামী সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংসদে নেতৃত্ব দিবে। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকটনিকস মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।