রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার নারীরা যে মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যান সেটা কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাদের আমরা স্যালুট করি। তারা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরা এলাকায় হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণার সময় এমন পর্যবেক্ষণ দেন ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি খান রোকনুজ্জামান একই এলাকায় জামায়াতের সমর্থক। তিনি বর্তমানে পলাতক।
আজ (২৪ মার্চ) বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২০৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের তিনটি করে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ের পর্যবেক্ষণে একাত্তরে ধর্ষণের শিকার নারীদের ত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, নির্যাতনের শিকার নারী যে মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যান সেটা কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাদের আমরা স্যালুট করি। তারা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।
রায়ের আগে খালেক মণ্ডলকে কারাগার থেকে এজলাসের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। অপর আসামি রোকনুজ্জামান পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারির আদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরা মহকুমায় রাজকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে মানবতবিরোধী অপরাধ করেন। রোকনুজ্জামান ছিলেন রাজাকার বাহিনীর সদস্য ও খালেক মন্ডলের সহযোগী।
রায়ে ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, যুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের ট্রাইব্যুনাল জাতির সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। মংলা বন্দরে জাহাজের মধ্যে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় ফেরার সময় বাংলাদেশের ছয়জন নৌকমান্ডোকে পাকিস্তানি সেনারা গ্রেফতার করে। সেখানে দুজনকে হত্যা করা হয় এবং চারজনকে ধরে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। সেখানে খালেক মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন এবং তার নির্দেশেই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
অপর অভিযোগে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনারা দুজনকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে একজন নারী মারাও যান। এখানে খালেক মণ্ডলের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও তিনি ইন্ধন দিয়েছেন।রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের অপর কৌঁসুলি রেজিয়া সুলতানা চমন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর খালেক মণ্ডলের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, খালেক মণ্ডল ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সংসদে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিলেন। একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আমরা সর্বোচ্চ আদালতে আপিলে যাবো। এখানে অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে। আশাকরি আপিলে আব্দুল খালেক মণ্ডল খালাস পাবেন।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে আসামি বানিয়ে আদালতে এনে যেভাবে শাস্তি দিচ্ছে- এতে দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য মোটেও ভালো হবে না।