শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি:
চেয়ারম্যান: মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ আসিফ খোন্দকার, আইনবিষয়ক সম্পাদক: অ্যাডভোকেট ইলিয়াস , যোগাযোগ : ০১৬১৬৫৮৮০৮০,০১৮১১৫৮৮০৮০, ঢাকা অফিস: ৪৩, শহীদ নজরুল ইসলাম রোড, চৌধুরী মল (৫ম তলা), টিকাটুলি ১২০৩ ঢাকা, ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশ মেইল: bdprotidinkhabor@gmail.com চট্টগ্রাম অফিস: পিআইবি৭১ টাওয়ার , বড়পুল , চট্টগ্রাম।

নিরাপদ স্তন্যদানে ব্রেস্টফিডিং কর্নার চান ঠাকুরগাঁওয়ের নারীরা

ঠাকুরগাঁওয়ে রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, শপিং মলে অধিকাংশ নবজাতকদের বুকের দুধ পান করানোর জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার না থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছে মায়েরা।

ক্ষুধার জ্বালায় নবজাতককে দুধ পান করাতে গেলে বিশেষ করে জনসমাগম পূর্ণ এসব স্থানে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হন মায়েরা।

ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনে রাজশাহীগামী আন্তনগর ট্রেন বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন শারমিন ইসলাম নামের এক যাত্রী। কোলে ছিল তার ৩ মাসের নবজাতক শিশু। এ সময় স্টেশনে লোকের সমাগম অনেক বেশি থাকায় অস্বস্তির মধ্য দিয়েও কাপড় ঢেকে বেবিকে বুকের দুধ পান করাতে হয়েছে তাকে।

শারমিন ইসলাম মনে করেন, একজন নবজাতককে এভাবে অনিরাপদ ভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো তার প্রতি জুলুম। কাপড়ের ঢাকনা দিয়ে দুধ পান করানো তার জন্য ঝুঁকি। তারপরেও তার ক্ষুধা নিবারনের জন্য হলেও এ ঝুঁকি আমাকে নিতে হয়েছে। স্টেশনে একটা ব্রেস্টফিডিং কর্ণার থাকলে আমরা সহজেই স্বাচ্ছন্দে বেবিকে বুকের দুধ পান করাতে পারি। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি ভাবা উচিৎ।

১ বছর বয়সী শিশুর মা পারুল বেগম বলেন, রাজশাহী যাবো। সঙ্গে কেউ নেই। আমি জানিনা আমার পাশের আসনে কে টিকিট কেটেছে। যেহেতু ট্রেন নিরাপদ বাহন তাই এখানেই ভ্রমন করি৷ কিন্তু ট্রেনের ভেতরে কোন ব্রেস্ট ফিডিং এর ব্যবস্থা নাই। ভেতরেও এ সেবা নিশ্চিৎ করা উচিৎ। তাহলে আমরা অস্বস্তিতে পড়বোনা।

ঠাকুরগাঁও বিআরটিসি বাসকাউন্টারে বসে আছেন চার নবজাতকের মা। উদ্দেশ্য রংপুর। সেখানেও নেই কোন ফিডিং এর ব্যবস্থা।

এ সময় রিয়া আক্তার নামের এক নব জাতকের মা বলেন, বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এখানে কোন ব্রেস্ট ফিডিং এর ব্যবস্থা নাই তাই লোকসম্মুখে বসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়তে হচ্ছে। আমরা মায়েরা যে কোন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে দুধ পান করাবো। তাই বলে কি ফিডিং এর উন্নত ব্যবস্থা হবেনা। সরকারের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা উচিৎ।

এদিকে অধিকাংশ ক্লিনিকের জেনারেল কক্ষেও দেখা যায়নি ব্রেস্ট ফিডিং রুম। সেখানেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে নবজাতকদের বুকের দুধ পান করাচ্ছেন মায়েরা। জেলার প্রত্যেকটি ক্লিনিকে যেন ফিডিং কর্ণার রাখা হয় সে দাবিও করেছে রোগী সহ তাদের দেখতে আসা অনেক শিশু সন্তানের মায়েরাও। এমন কি এসব সুবিধা না রাখলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করার দাবি করেছেন স্বজনরা। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গুলো বলছেন তারা এ সুবিধা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের সমাজ কর্মী নুসরাত জাহান নিশি বলেন, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার না থাকায় দুধ পানের ক্ষেত্রে শিশুদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশে শিশু ও মা কে দুধ পানের ক্ষেত্রে এ সুবিধাটা নিশ্চিত করা হলেও দেশে এখনো বাস স্টেশন, রেল স্টেশন সহ পাবলিক পার্ক ও অন্যান্য জায়গাগুলোতে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন জরুরি। আমরা কেউ চাইবোনা শিশুরা অধিকার বঞ্চিত হোক। সেই সাথে প্রত্যেকটি কর্মস্থলে যেখানে নারীরা কাজ করেন সেখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হওয়া জরুরি।

হেলাল উদ্দীন বিশাল এক নবজাতকের বাবা। বলেন, অনেক শিশু ডাক্তারের চেম্বারে নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার। শহরে ও শহরের বাইরে রোড এলাকাসহ অনেক শিশু চিকিৎসক বসেন। তাদের কাছে অনেক রোগীও আসেন। কিন্তু সে চেম্বারগুলোতে বুকের দুধ পান করাতে গিয়ে বিব্রত হন মায়েরা। এছাড়াও রাস্তাঘাটে চলন্ত রিক্সা ও ইজিবাইকেও শিশুদের ওড়না ঢেকে দুধ পান করাতে দেখেছি। সেক্ষেত্রে পাবলিক ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণারও হতে পারে।

ঠাকুরগাঁওয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মায়ের বুকের দুধ সন্তানের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর সময় অবশ্যয় মায়ের নজর সন্তানের উপর রাখতে হবে। অন্যথায় দুধ গলায় আটকে গেলে বা বাচ্চাকে দেখতে না পেলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই বুকের দুধ পান করানোর জন্য অবশ্যয় নিরাপদ ভাবে পান করাতে হবে। শাড়ির আচল কিনবা ওড়না দিয়ে ঢেকে দুধ পান করানো ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব স্থানে জনসমাগম রয়েছে সেসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঠাকুরগাঁও আধনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: রাকিবুল ইসলাম চয়ন বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন নরমাল ও সিজার ডেলিভারি হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৮০-১০০ জন শিশু ভর্তি থাকছে। এখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার রয়েছে। কিন্তু ক্লিনিক গুলোতে তাদের সেবার মানের কথা চিন্তা করে উদ্যোগ নিতে পারেন ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার বানানোর। এটা নি:সন্দেহে একটা সভ্য সুবিধা নবজাতক ও মায়েদের জন্য।

ঠাকুরগাঁওয়ে কত সংখ্যক শিশু রয়েছে যারা মায়ের বুকের দুধ পান করেন এমন হিসাব চাইলে জানাতে পারেননি জেলা পরিবার পরিকল্পণা বিভাগের উপপরিচালক ফারুক আব্দুল্লাহ্ । তবে শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণারের বিষয়ে তিনি ইতিবাচক মন্তব্য করে বলেন। ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন করা গেলে অবশ্যয় এর সুবিধা ভোগ করবে নবজাতক ও নবজাতকের মা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো: শামসুজ্জোহা বলেন, শহরের শপিংমল, চিকিৎসা কেন্দ্র, রেল স্টেশন, বাস স্টেশন সবখানেই নবজাত দেখা যায়। ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার বিষয়ে আমরা অবশ্যয় সংশ্লিষ্ট মিটিংগুলোতে আলেচানা করবো।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি
Design & Development BY ThemeNeed.Com