গত বছরের নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির জরিপ চালান বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। এতে তার কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছিল। মাস পাঁচেক পর সেই টুইটারের ৯.২% শেয়ার কিনে নিলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার সিইও।
সোমবার (৪ এপ্রিল) প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কেনা শেয়ারের মাধ্যমে বর্তমানে ইলন মাস্ক টুইটারের সর্বোচ্চ শেয়ারের অংশীদার। ফলে এক লাফে টুইটারের শেয়ারের দাম ২৭%-এরও বেশি বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কিছুদিন আগেই টুইটারের বাকস্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে আসার আভাস দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। পরে পৃথক এক টুইটবার্তায় তিনি “এডিট” বাটন চাওয়ার ব্যাপারে পোল আয়োজন করে ব্যবহারকারীদের কাছে ভোট চান। ইলন মাস্কের ওই টুইটের পর প্রতিষ্ঠানটির সিইও পরাগ আগারওয়াল ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কতার সঙ্গে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে পোল শুরু করার তিন ঘণ্টারও কম সময়ে ১২ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী ভোট দেন। এর মধ্যে ৭৫%- এরও বেশি ব্যবহারকারী এডিট বাটনের পক্ষে ভোট দেন।
গত সপ্তাহে পৃথক আরেকটি পোলে টুইটারের অ্যালগরিদম ওপেন সোর্স রাখা উচিত কি-না জানতে চান। সেখানে ৮২% ব্যবহারকারী অ্যালগরিদম ওপেন সোর্স অর্থাৎ উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দেন।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও জ্যাক ডরসি এ ব্যাপারে জানান, অ্যালগরিদম ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।
২০০৯ সালে টুইটার ব্যবহার শুরু করেন ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে ইলন মাস্কের ৮ কোটিরও বেশি অনুসারী রয়েছে। মূলত বিভিন্ন ঘোষণা দেওয়ার জন্য তিনি টুইটার ব্যবহার করে থাকেন।
নিজে টুইটারের নিয়মিত ব্যবহারকারী হলেও প্রায়ই তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির সমালোচনা করেন। সম্প্রতি টুইটার বাকস্বাধীনতা নীতি মেনে চলে কি-না, তা জানতে চেয়ে তিনি ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে পোল আয়োজন করেছিলেন। তাতে ৭০% এর বেশি ব্যবহারকারী "না"-এর পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
গত ডিসেম্বরে টুইটারের সিইও আগারওয়ালকে সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ স্টালিনের সঙ্গে তুলনা করে একটি মিম পোস্ট করেন ইলন মাস্ক। সেই সঙ্গে ওই মিমে নভেম্বরে পদত্যাগ করা জ্যাক ডরসিকে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
টুইটারের সর্বশেষ ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়। সামনে অডিও চ্যাট রুম ও নিউজলেটারের মতো কিছু ফিচার নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও বিশ্লেষকরা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ও গ্রাহক প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন।
মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ইলন মাস্ক টুইটারের আনুমানিক ৭৩.৫ মিলিয়ন শেয়ার কিনেছেন। ৮.৭৯% শেয়ার নিয়ে ভ্যানগার্ড হলেন ইলন মাস্কের পর টুইটারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার।
গত ১২ মাসে টুইটারের শেয়ারের দাম ৩৮% কমলেও গতকাল টুইটারের শেয়ারের দাম ২৭.১% বেড়ে ৪৯.৯৭ ডলারে পৌঁছেছে। সোমবার টুইটারের বাজার মূলধনে ৮.৩৮ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়ে ৩৯.৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ফোবর্সের মতে, ইলন মাস্কের মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে কর দেওয়ার জন্য নিজের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের প্রতিষ্ঠান টেসলার ১০% শেয়ার বিক্রি করার কথা জানান ইলন মাস্ক। এরপর ১৬.৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করেছেন তিনি।
সিএফআরএ গবেষণা বিশ্লেষক অ্যাঞ্জেলো জিনো জানান, টুইটারে ইলন মাস্কের বিনিয়োগ তার মোট সম্পদের তুলনায় খুবই কম। ইলন মাস্ক চাইলে পুরো টুইটারকেও কিনে নিতে পারেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, টুইটারে ইলন মাস্কের আধিপত্য বাড়লে সেটি প্রতিষ্ঠান ও এর অংশীদারদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright By MOHAMMAD ASIF