শবে বারাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে ক্বদরের পর গুরুত্বপূর্ণ রাতসমুহের মধ্যে শবে বারাত অন্যতম। শবে বারাত- এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।’ ‘শাব’ ফার্সী শব্দ, যার অর্থ রাত। আর বারাত আরবী শব্দ যার অর্থ ‘মুক্তি’ ‘নাজাত’ ইত্যাদি।
ইসলামি শরিয়তে শবে বারাতের গুরুত্ব অপরিসীম কেননা এটি মুসলিম উম্মাহর নাজাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। ঈমানদার বান্দাগন যখন এ রজনীতে ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন তখন শয়তান বড্ড বেজার ও দুঃখী হয়ে যায়। সে তার সাথীদেরকে উদ্বুদ্ধ করে এ মহিমান্বিত রজনীর ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার, তেলাওয়াতে ক্বুরআন ইত্যাদি থেকে মানুষকে বিরত রাখতে। এ মহিমান্বিত রজনীতে এ সব কাজকে বিদয়াত বলে সরলমনা মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করতে কিছু লোককে নিয়োগ করে।
হুযূর পাক থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এ রাত মুসলিম উম্মাহর কাছে নাজাতের উসিলা ও পবিত্র হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। আজ পর্যন্ত কেউ এটা নিয়ে সামান্যতম মতবিরোধ করেনি। মানুষ যখন অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, গান-বাজনা, বেহায়াপনায় ঘুরপাক খাচ্ছে সে সময় শবে বারাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ রজনীর মর্যাদাকে অস্বীকার করা বা এ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা কত বড় জঘন্য কাজ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কাজ আজ পর্যন্ত ইবলিশ শয়তানের ছিলো, সে কাজ কিছু অজ্ঞ ব্যক্তি করে আসছে, মানুষকে ইবাদত বন্দেগী থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে।
এ আবার কেমন মুসলমানের (নামধারী) আবির্ভাব হলো যে মুসলমানদের ইবাদত করা থেকে দূরে রাখতে চায়? এ কেমন শয়তানের অনুসারীদের আবির্ভাব হলো যারা মুসলমানের বেশ ভুষায় ঈমান বিরোধী কাজ করছে, নামায-রোযা থেকে দূরে রাখছে, গরীব মিসকিনদের দান করে থেকে নিষেধ করছে, রোযা রাখা থেকে মানা করছে? এটিই আখেরি জামানা, যার বিষয়ে হাদীসে এসেছে যে, আখেরি যামানায় হাতে আগুন নেয়া সহজ হবে, কিন্তু ঈমান বাঁচানো কঠিন হবে। আল্লাহ আমাদের ঈমানের হিফাযত দান করুন। আমিন
কুরআন ও হাদীস -এর ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শাব’ শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এ না থাকাটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে যে, কুরআনের ভাষায় ‘শবে বারাতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদীসের ভাষায় শবে বারাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই কেউ যদি ক্বুরআনে শবে বারাত খুজে তাহলে সেটা অবশ্যই বোকামি হবে যেমনটা ক্বুরআনে নামায রোযা খোজাটা হবে।
আল্লাহ ইরশাদ করেন- অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে ক্বুরআন নাযিল করেছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজ গুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।(সূরা দুখান-৩, ৪,৫)।
এ আয়াতের প্রসঙ্গে রাঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ (যার জন্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ঈমাম তিরমিযি বর্নিত হাদিসে দুয়া করেছেন যে, হে আল্লাহ তুমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে কুরয়ানের ব্যাখ্যা করার জ্ঞান দান করুন) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন, "মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা'বান মাসের মধ্য রাত বা শবে বারাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।" (সফওয়াতুত তাফসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, রুহুল বয়ান, আবী সাউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন ইত্যাদি) তবে অন্যান্য মুফাসসিরিন এই আয়াতের প্রেক্ষাপট হিসেবে শবে ক্বাদরকেও আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু নিচে বর্ণিত কিছু সহিহ হাদিস দেয়া হল, যার বিষয়ে হক্কানী আলেমদের কোনো মতবিরোধ নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright By MOHAMMAD ASIF