মো. সেলিম উদ্দিন খাঁন
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া- লোহাগাড়া) সংসদীয় আসনে বিএনপি একক প্রার্থী নাজমুল মোস্তফা আমিন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়ে গণসংযোগ করছেন শাহজাহান চৌধুরী। এদিকে জামায়াত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াই করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে স্থানীয়দের। অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোট কোনো প্রার্থীর পক্ষে যাবে সে বিষয়ও আলোচনা চলছে।
সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের এক জটিল প্রতীক—যেখানে বিএনপি বহু বছর ধরে নিজ ঘরেই পরিণত হয়েছে কার্যত বিরোধী দলে। এ আসনটি বহু দশক ধরে পরিচিত জামায়াত-শিবিরের দৃঢ় দুর্গ হিসেবে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রথম এমপি ছিলেন বিএনপি দলীয় জননেতা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী; পরে দায়িত্ব নেন কর্ণেল অলী আহমদ বীরবিক্রম। কিন্তু সেই সময় থেকেই আসনটির রাজনৈতিক সমীকরণ ক্রমশ বদলে যেতে থাকে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ এসে যায় জামায়াতের হাতে—কারণ দলটি তখন বিএনপির শরীক। ফলে প্রশাসনিক প্রভাব, উন্নয়ন বরাদ্দ, সাংগঠনিক শক্তি—সব জায়গায় বিএনপির অস্তিত্ব ঢাকা পড়ে যায় শরীক দলের প্রভাবের নিচে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষায়, বিএনপি নিজের আসনেই হয়ে পড়ে “বিরোধী দল”, যা দীর্ঘ মেয়াদে সৃষ্টি করে সাংগঠনিক ভাঙন ও নেতৃত্বের সংকট। বিএনপির কাছে এ আসন তখন হয়ে ওঠে “দুরাকাশের তারা”—দেখা যায়, কিন্তু ধরা যায় না। একে ঘিরেই তৈরি হয় জনশ্রুতি—এ আসনে নাকি বিএনপির ‘শনির দশা’ চলছে। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেই পুরনো সংকট।
এবার বিএনপি–জামায়াতের কোনো জোট নেই। ফলে ধানের শীষের মনোনয়নকে ঘিরে শুরু হয় চরম প্রতিযোগিতা—মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন নাদিম চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও জসিম উদ্দিন। নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে মনোনয়ন পেলেন নাজমুল মোস্তফা আমিন। প্রার্থী ঘোষণার পরপরই বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে নেমে আসে আনন্দের ঢেউ, দীর্ঘদিন পর একটি আসল দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ ফিরে পাওয়ার উচ্ছ্বাস নিয়ে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আনন্দের সঙ্গে রয়েছে বাস্তবতার কঠিন হিসাব। কেননা এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, প্রবীণ নেতা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী—যিনি স্থানীয়ভাবে ‘বাঘা প্রার্থী’ হিসেবে পরিচিত। অতীত নির্বাচনের ইতিহাস বলে, এ অঞ্চলে বারবারই জিতেছে জামায়াত। ফলে নাজমুল মোস্তফা আমিনের সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়—সংগঠন পুনর্গঠন, মাঠ নিয়ন্ত্রণ, ভোটার আস্থা আদায়—সব মিলিয়ে কঠিন এক রাজনৈতিক যুদ্ধে নামতে হচ্ছে তাকে।
স্থানীয়দের বড় প্রশ্ন: “বিএনপির দুর্ভাগ্যের চক্র কি এবার ভাঙবে? নাকি শেষ মুহূর্তে ধানের শীষ আবারও হবে বিভ্রান্ত ও দুর্বল?” তবে মাঠের উৎসাহ, কর্মীদের সক্রিয়তা এবং দীর্ঘদিন পর দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার উদ্দীপনা—এসব মিলিয়ে অনেকেই মনে করছেন, বিএনপির ‘শনির দশা’ কাটার সম্ভাবনা এবার আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright © 2025 বাংলাদেশ প্রতিদিন খবর. All rights reserved.