মো. সেলিম উদ্দিন খাঁন
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা ভূমি অফিস ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হবে কবে-? পর্দা ভেদ করে দুর্নীতির গোমড় একে একে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পর্দার পর্দা ছিল না বলে পর্দা কাহিনী জেনে গেছে সাতকানিয়ার জনগণ। সাতকানিয়া উপজেলা ভূমি অফিস—সরকারি অফিস, কিন্তু কাজের গন্ধে নয়, ঘুষের দুর্গন্ধে এখন ভরপুর। ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজ করতে গেলে মানুষের হাতে আগে কাগজ নয়, গুনতে হয় টাকার বান্ডিল। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘুষ বাণিজ্যের মূল নায়ক নাজির কাম ক্যাশিয়ার রিমন বড়ুয়া। ভুক্তভোগীরা জানালেন, শুনানির তারিখ ঠিক করতে হলে রিমন বড়ুয়ার হাতে নগদ টাকা গুনতে হয়। টাকা না দিলে তারিখের জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয় অফিসে। কেউ যদি ঘুষ না দেয়, সে ফাইল পড়ে থাকে বছরের পর বছর। শুনানির পর রায়ের কপি পেতেও দিতে হয় একই অঙ্কের টাকা। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি দিয়ে রায়ের কপি পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। রিমনের পকেটে ঘুষের টাকা না ঢুকলে কপির জন্য হাহাকার করলেও কাজ হয় না। সরকারি ফি’র বাইরে এভাবে খোলাখুলি ঘুষ দাবি এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে সাতকানিয়া ভূমি অফিসে। মানুষ বলছে—এ অফিসে ন্যায্য কাজও করতে হলে ঘুষের টাকার গন্ধ না ছড়ালে ফাইল নড়ে না! ভূমি অফিসের কাজ করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ বলছে, ফি তালিকায় যেটা লেখা আছে, সেটা শুধু নামেই আছে। বাস্তবে কাজ করতে গেলে আগে রিমন বড়ুয়ার হাতে গুনতে হয় নগদ টাকা। শুনানির তারিখ দিতে গেলে ৫ হাজার টাকা না দিলে তারিখই পড়ে থাকে বছরের পর বছর। মামলা পেন্ডিং, মানুষ দৌড়াচ্ছে—তবু কাজের গতি নেই। শুনানির পর যখন রায়ের কপি দরকার হয়, তখনও একই কাণ্ড। সরকারি ফি মিটিয়েও রায়ের কপি পেতে হয় ঘুষের পাহাড় পেরিয়ে। ৫ হাজার না দিলে মাসের পর মাস পচে যায় ফাইল, আর কপির জন্য মানুষ ঘুরতে থাকে।
নোমান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি অফিসে গিয়ে মনে হয় আমরা দেশের নাগরিক না, ভিক্ষুক। শুনানির তারিখ নিতেও ঘুষ, রায়ের কপি নিতেও ঘুষ—এ কেমন রাষ্ট্র! তার পরিবার থেকে রিমন বড়ুয়া মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া জিটিভির সাংবাদিক হারুন আর রশিদ জানান, তার এক নিকটাত্মীয় থেকে রিমন বড়ুয়া সাত হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। নাজির কাম ক্যাশিয়ার রিমন বড়ুয়ার নামেই এখন ক্ষুব্ধ মানুষের আঙুল উঠছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি শুধু ঘুষ নিচ্ছেন না, বরং ঘুষের নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, রিমনের হাতে টাকা দিলে ফাইল চলে যায় উপরে, না দিলে ফাইলের ধুলোও ঝাড়ে না কেউ। অনেকেই জানালেন, সরকারি নিয়মকানুন না জেনেই তাকে মানতে হচ্ছে, কারণ তার হাতে ক্ষমতা—ফাইল ধরে রাখার, কাজ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা। মানুষের ক্ষোভ আর আর্তনাদ প্রতিদিন সাতকানিয়া ভূমি অফিসে ভিড় করছে অসংখ্য মানুষ। কেউ আসছে জমির কাগজ ঠিক করতে, কেউ মামলার তারিখের জন্য, কেউ রায়ের কপি হাতে পেতে। কিন্তু সবার মুখে এক কথা—“ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না।” এক বয়স্ক মানুষ বললেন, বাধ্য হয়ে আমি জীবনে প্রথমবার জমির কাগজের জন্য ঘুষ দিতে হলো। না দিলে কাজই হচ্ছিল না। দেশের স্বাধীনতা হলো আমাদের জন্য—নাকি ঘুষখোরদের জন্য? এ বিষয়ে রিমন বড়ুয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মাহমুদুল হাসান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright © 2025 বাংলাদেশ প্রতিদিন খবর. All rights reserved.