মোঃ সেলিম উদ্দিন খাঁন বিশেষ প্রতিনিধি:
প্রকৃতিকে নিজের প্রয়োজনে অতিমাত্রায় ব্যবহার করেই এগিয়ে যাচ্ছে মানব সভ্যতা। সমাজের আধুনিকায়ন এবং উন্নতি যে পরিমাণে হচ্ছে ততই প্রকৃতি তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। প্রতিদিনই মানুষ বন উজাড় করছে, নির্বিচারে গাছ কাটছে, অরণ্য ধ্বংস করছে।
সেইসঙ্গে পশু-পাখি নির্বিচারে হত্যা করছে। আর নিজেদের উদর ভর্তি করছে বিপন্নপ্রায় প্রাণী হতে শুরু করে সব ধরনের জীব-জন্তু দিয়ে। সর্বভুক এই মানুষ সব কিছুই খাচ্ছে নির্বিচারে। সাপ থেকে শুরু করে পোকামাকড় পর্যন্ত কিছুই বাদ দিচ্ছে না।
আবার টেবিলে নষ্ট করছে বিপুল পরিমাণ খাবার। তবে সব অন্যায্যতার একটি সীমা-পরিসীমা রয়েছে। সীমা লঙ্ঘন করলেই বিপদের মুখে পড়তে হয়। যদিও মানবজাতি এখনও বিপদকে বিপদ বলতে নারাজ। তাই শেষ পরিণতি নিয়েও আমরা শঙ্কিত না।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলেছে। এতে বিশ্বের প্রধান তেল আমদানি-রপ্তানির বন্দরগুলো মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি একটি বৈপরীত্যপূর্ণ পরিস্থিতি যেখানে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছে। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যাধিক ব্যবহারই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি বেশি মনোযোগ দিলে উষ্ণায়ন থামানো যেতে পারে এবং টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করা সম্ভব। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র এক মিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে ১৩টি প্রধান জ্বালানি তেল বন্দর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর মধ্যে সৌদি আরবের রাস তানুরা ও ইয়ানবু বন্দর তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুটি বন্দর থেকে সৌদি আরবের রেকর্ড ৯৮ শতাংশ তেল রপ্তানি হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন ওগ্যালভেস্টনসহ
সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, সিঙ্গাপুর এবং নেদারল্যান্ডসের কয়েকটি বন্দর হুমকির তালিকায় রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইোস্ফিয়ার ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভ (আইসিসিআই)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের কমপক্ষে এক মিটার উচ্চতা বৃদ্ধি আগামী ১০০ বছরের মধ্যে অনিবার্য।
বরফখণ্ড ধসে পড়লে এবং ক্ষতিকর গ্যাসের নির্গমন কমানো না গেলে এটি ২০৭০ সালের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইতোমধ্যে জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ত পানির ক্ষতিকর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্ষতিকর গ্যাসের তীব্র নির্গমন কমিয়ে আনতে পারলে এই দূষণের মাত্রা ধীর হবে এবং এর প্রভাব কমানো সম্ভব। অব্যাহত জীবাশ্ম জ্বালানির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আইসিসিআই-এর প্রধান পাম পিয়ারসন জানিয়েছেন, যেসব তেলবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে, তাদের ভবিষ্যতের চরম পরিবর্তনগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
এটি জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমাগত ব্যবহারের জন্য দায়ী।গবেষণায় আরও বলা জানিয়েছে, 'সৌদি আরবের রাস তানুরা ও ইয়ানবু বন্দর শুধুমাত্র ২০২৩ সালে ২১৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল রপ্তানি করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ১৩টি বন্দর একত্রে ২০২৩ সালে মোট তেল রপ্তানির ২০ শতাংশ সরবরাহ করেছে।
জিরো কার্বন অ্যানালিটিক্সের মারে ওয়ার্দি জানিয়েছেন, 'উষ্ণায়মান বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা টেকসই জ্বালানির পরিবর্তে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়াই এখন হচ্ছে একমাত্র নিরাপদ পথ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright By MOHAMMAD ASIF