স্পোর্টস ডেস্কঃ
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১০ সদস্যের যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তা নিয়েই উঠেছে বড় প্রশ্ন। কারণ, ওই ১০ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিজেরাই তদন্ত করবেন!
বাফুফের গঠন করা এই তদন্ত কমিটিকে হাস্যকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন দুই সাবেক তারকা ফুটবলার ও এক সময়ে বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও হাসানুজ্জামান খান বাবলু। তারা দুজনই মনে করছেন, দেশের মানুষকে বোকা ভাবেন বাফুফে কর্মকর্তারা। তাই নিরপেক্ষ কাউকে না দিয়ে নিজেদের অপরাধ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নিজেরাই নিয়েছেন।
বাফুফের বর্তমান যে টালমাটাল অবস্থা তা নিয়ে কি বলবেন? প্রশ্ন করতে আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুর জবাব, ‘কী আর বলবো? গত ৬-৭ বছর থেকে গণমাধ্যম, ফুটবল সংশ্লিষ্ট সবাই বলে আসছিলেন; কিন্তু বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। এখন ফিফা যখন সব প্রমাণ পেয়ে সাধারণ সম্পাদককে নিষিদ্ধ করলো, দেশের সম্মানহানী হলো- তখন সবাই বুঝতে পারলেন।’
তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, ‘এ কেমন তদন্ত কমিটি? যে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত, সেই প্রতিষ্ঠানের লোকজনই তদন্ত করবেন। হাস্যকর। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি নয় কেন? আসলে বাফুফেতে যারা আছেন তারা মনে করেন, আমরা বোকা আর ওনারা চালাক। আমি একটা জিনিস বুঝি, বেতনভুক্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাহী কমিটির নির্দেশে চলেছেন। সভাপতি ও সিনিয়র সহসভাপতির নির্দেশে চলেছেন।
এর বাইরে তার এক পা অগ্রসর হওয়ারও সুযোগ ছিল না। তাই তদন্ত কেবল সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নয়, সবার বিরুদ্ধে করতে হবে। ঘরের লোক দিয়ে সেই তদন্ত করে লাভ নেই। এই কমিটি কেবল নিজেদেরই রক্ষার চেষ্টা করবে।’
বাফুফেতে বিভিন্ন সাব-কমিটির অধীনে কাজ হয় উল্লেখ করে আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘আমি বাফুফেতে ছিলাম। জানি কীভাবে সেখানে কাজ হয়। অনেকগুলোর সাব-কমিটি আছে। সাব-কমিটি সভা করে সিদ্ধান্ত জানাবে সাধারণ সম্পাদককে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাহী কমিটির অনুমোদন নিয়ে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করবে। এখানে নির্বাহী কমিটির বাইরে গিয়ে কোন কিছু করার একচুলও ক্ষমতা ছিল না সাধারণ সম্পাদকের।
তাই আমি বলবো- অডিট কমিটি, ফিন্যান্সসহ অন্যান্য সাব-কমিটি, নির্বাহী কমিটি সবাই এই অনিয়েমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন ফিফা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন কারো মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। কারণ, তারা জানে ফিফা অনেক দিন ধরে সবকিছু খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সবাই নিজেদের গা বাঁচাতে সব দোষ সোহাগের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।’
হাসানুজ্জামান খান বাবলু বলেছেন,‘তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বোকা বানাতে চাইছেন বাফুফে কর্মকর্তারা। যারা অপরাধী তাদেরকেই বলা হচ্ছে বিচার করো। এটা হাস্যকর, অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। তাই এত কিছুর পরও বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারা দম্ভ নিয়ে চলছেন। নির্লজ্জভাবে কথা বলছেন।’
বাফুফের অর্থকড়ির বিষয়টিতো ফিন্যান্স কমিটির মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাহলে ওই কমিটির কি কোনো দায় নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুজ্জামান খান বাবলু বলেন, ‘এসবের বিপক্ষে বাদল রায়সহ অনেকে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবাদ করে আসছিলেন; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
বাফুফের নির্বাহী কমিটির বডি থাকলেও আসলে ফেডারেশন চালাতেন সালাউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী ও সোহাগ। তাদের বাইরে কারো পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। এদের বাইরে কারো কিছু করারও নেই। এখন সোহাগের ওপর এককভাবে দায় চাপিয়ে অন্যরা নিজেদের গায়ের চামড়া বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।’
বাফুফের একটা অডিট কমিটি আছে। যে কমিটি আয়-ব্যয়ের অডিট করে থাকেন। তাহলে এত অনিয়ম তাদের নজরে কেন আসলো না? ‘আসলে ক্ষমতায় থাকার জন্য যে যার মতো করে কাজ করেছেন। কমিটিতে তাদেরই রাখা হয়েছে যারা বাফুফের শীর্ষ স্থানীয়দের কথামতই কাজ করেন।
এখানে সবারই দায় আছে। সাধারণ সভায় যারা অনিয়মগুলো অনুমোদন করেছেন তারাও দায় এড়াতে পারবেন না। যারা সাধারণ সভায় দুই হাত তুলে অনিয়ম অনুমোদন দিয়েছেন তারাই এখন ফেসবুকে সমালোচনা করছেন বাফুফের। আসলে বাফুফেতে সোহাগ ছিলেন হুকুমের গোলাম। সালাউদ্দিন-সালামদের কথা না শুনলে তিনিও থাকতে পারতেন না। বাফুফেতে আসল সুবিধাভুগি তো সালাউদ্দিন-সালাম।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright By MOHAMMAD ASIF