আজ (২৫ নভেম্বর) শুক্রবার। ঠিক ২ বছর আগে এই দিনে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ফুবলের অবিসংবাধিত নায়ক দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। গোটা বিশ্বকে কাঁদিয়ে চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি।আজ (২৫ নভেম্বর) শুক্রবার তার দ্বিতীয় মৃত্যুদিবস। বুয়েন্স আয়ার্সে হার্ডিন বেসা ভিস্তায় মাটির নিচে শুয়ে রয়েছেন তিনি। তার সমাধি সৌধটা ফুলে-ফুলে ঢেকে গেছে বৃহস্পতিবার থেকেই।
ম্যারাডোনা আর নেই, এখনও বিশ্বাস করেন না আর্জেন্টাইনরা। তারা মনে করেন, ফুটবলের রাজপুত্র নিশ্চয়ই বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিদের সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করছেন। মরুদেশ কাতারে ৩৬ বছর পরে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলে হয়তো আবার সমার সামনে এসে উন্মাতাল আনন্দে উল্লাস করে উঠবেন।
গতকাল (২৪ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী ও সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে ওয়াকিম সাইমন পেদ্রোসও জানালেন, ম্যারাডোনা আর নেই তা তিনি মানেন না। তিনি ফুলের সঙ্গে মেসির ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন বেসা ভিস্তায়। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শেষ ষোলোয় উঠলে কাতারে যাবেন ঠিক করেছেন তিনি।
কিন্তু প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে প্রিয় দলের হার দেখার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন পেদ্রোস। বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ওয়াকিম বলছিলেন, ‘দিয়েগো ম্যারাডোনা আপনাদের কাছে মৃত; কিন্তু আমরা তা মানি না। তার মৃত্যু হয় না।’
কী প্রার্থনা করলেন তার সমাধির সামনে গিয়ে? আবেগরুদ্ধ গলায় ওয়াকিম পেদ্রোস বললেন, ‘মেক্সিকোতেই ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন দিয়েগো। শনিবার সেই মেক্সিকো ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ। দিয়েগো চাইলেই হয়তো আমরা জিতবো।’ মেসির ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন কেন? ‘লিওর জন্য আশীর্বাদ চাইতে!’
ম্যারাডোনাকে অমর বললেও ২৫ নভেম্বর দিনটা এলেই অলিখিত শোকদিবস পালন হয় আর্জেন্টিনায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার কোটি ভক্ত-সমর্থক। সর্বত্রই এক দৃশ্য দেখা যায়। মেসির রোজারিও থেকে কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে আসা তিন যুবক দোহার ডাউন টাউনে ম্যারাডোনাকে নিয়ে শুরু হওয়া প্রদর্শনী দেখতে যাচ্ছিলেন। ওয়াকিমের মতো তারাও মেসিদের জন্য প্রার্থনা করবেন।
কিন্তু দোহার মেট্রো স্টেশনে একদল মেক্সিকোর সমর্থকের সুরে গলা মিলিয়ে ব্রাজিল ভক্তরা যেভাবে তাদের দেখে ‘মেসি চাও...মেসি চাও...’ চিৎকার করছিলেন তাতে রীতিমতো ভেঙে পড়েন তারা। স্প্যানিশে ‘চাও’ শব্দের অর্থ বিদায়! সেখানে মাত্র তিনজন থাকায় সেবাস্তিয়ানরা প্রতিবাদ করতে পারেননি।
কিন্তু আর্জেন্টিনার বাকি সমর্থকরা ছেড়ে দেবেন কেন? মেক্সিকোরই এক সাংবাদিক গণমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, লুসাইল মেট্রো স্টেশনে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই দেশের সমর্থকরা। মেক্সিকানদের ক্রমাগত বিদ্রুপ ও কটাক্ষ সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেন আর্জেন্টাইনরা। শুরু হয়ে যায় সংঘাত।
বিদায়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনা শিবিরেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে মেসিরা অনুশীলন করলেন গোপনে। সংবাদমাধ্যমের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আগেই জারি করেছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। এদিন অনুশীলনের সময় বের করে দেন নিরাপত্তরক্ষীদেরও। থাকতে দেননি কোচিং দলের সদস্য ছাড়া আর কাউকেই।
গোড়ালির সমস্যায় ভুগতে থাকা মেসি কী অবস্থায় রয়েছেন, তা কি গোপন রাখতে চান আর্জেন্টিনা কোচ? সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পুরো ম্যাচ খেললেও আর্জেন্টিনা অধিনায়ক গোড়ালির সমস্যা এখনও দূর হয়নি বলে দাবি করছে তার দেশেরই সংবাদমাধ্যম। আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিক বলছিলেন, ‘স্কালোনি প্রবল চাপে রয়েছেন। একদিকে মেসির গোড়ালির সমস্যা, অন্যদিকে রক্ষণের বেহাল অবস্থা। মেক্সিকো ম্যাচ আরও কঠিন হবে। সামান্য ভুল হলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।’
যদিও আর্জেন্টিনা টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য জানালেন, ২৫ নভেম্বর ম্যারাডোনার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ফুটবলের রাজপুত্রকে শ্রদ্ধা জানাতেই নাকি রুদ্ধদ্বার অনুশীলনের সিদ্ধান্ত নেন স্কালোনি! ফুটবলাররা শপথ নেবেন মেক্সিকোকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর।
অর্থ্যাৎ, ম্যারাডোনা না থেকেও রয়ে গেছেন কাতারে আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে!
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: বিল্লাল হোসেন
www.e.bdprotidinkhabor.com
Copyright By MOHAMMAD ASIF